* আব্দুর রহমান আল হাসান
“পরীক্ষা হবে” কথাটা শুনলেই মনে হয়, কঠিন একটা দিন আসছে। যেটার জন্য আমি কখনোই প্রস্তুত নই। তারপরও একপ্রকার বাধ্য হয়েই পরীক্ষা দিতে হয়। একের পর এক। এ যেন শেষ হয় না। পরীক্ষার দিনগুলো মনে হয়, একেকটা বছরের সমান। আর পরীক্ষার হলে কিছু ব্যক্তিদের সময় এত তাড়াতাড়ি চলে যায়, মাথাটা নিচু করে আবার উচু করলেই দেখে ১৫ মিনিট শেষ! আবার কারো জন্য সময় এত ধীরে যায়, মাথা নিচু করে আবার উচু করে দেখে মাত্র ৮ সেকেন্ড গেল। এখানেই তো বিখ্যাত আইনিষ্টাইনের বিখ্যাত থিউরী অব রিলেটিভিটি অর্থাৎ আপেক্ষিক তথ্যের সত্যতা হারে হারে টের পাওয়া যায়। আমার নিকট পরীক্ষার দিনগুলো একাধারে বিরক্তিকর এবং অসাধারণ মনে হয়। পরীক্ষার সময় সবচেয়ে বড় স্বাধীনতা হলো, সবাই যার যার মতো ব্যস্ত। তাই এ সময়টাতে গল্প পড়া এবং গল্প লেখার মতো পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। যাদের ঘুম বেশি, তারা তো বিসমিল্লাহ বলে এই যে ঘুম দেয়, সকাল-দুপুর পার হয়ে বিকাল গড়িয়ে যায়, কিন্তু বান্দার ঘুম আর শেষ হয় না। পরীক্ষার সময় যখন আমি হলে থাকি, তখন আমি চিন্তা করে কূল পাই না যে, তারা এত কি লেখে? আমার কাছে আশ্চর্য মনে হয় যখন শুনি, সময় শেষ হওয়ার পর খাতা নেয়ার সময় তারা বলে, আরো ১৫ মিনিট সময় দেন। লেখা বাকী আছে। বাবারে!! এই বান্দাকে যদি ৪ ঘন্টা সময়ও দেয়া হয়, তাহলেও সে বলবে, আরো ১৫ মিনিট সময় দেন।
আমি কখনো পরীক্ষার হলে পূর্ণ ৩ ঘন্টা থেকেছি নাকি মনে পড়ে না। সাধারণত ১ ঘন্টা বা ২ ঘন্টা পর হল থেকে বেরিয়ে যাওয়াই আমার অভ্যাস। অনেকে যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করে, এত তাড়াতাড়ি তোমার লেখা শেষ হয় কিভাবে? তখন আমার উল্টো তাদেরকে প্রশ্ন করতে মন চায়, পরীক্ষার হলে এতক্ষণ বসে থাকো কিভাবে? কিন্তু তাদেরকে কখনো এই প্রশ্ন করলে তারা তা হেসেই উড়িয়ে দিবে। তারা থাকুক তাদের মতো, আমি আমার মতো থাকলেই হলো।
আমি আমার এ বছরের প্রথম পরীক্ষাটি খানিকটা স্মৃতির পাতায় সংরক্ষিত রাখতে চাই। এ বছর ব্যক্তিগত কারণেই আমি মাদরাসায় অনাবাসিক আছি। আগে কখনো ছিলাম না। সাধারণত মেশকাত জামাতের ছাত্র অনাবাসিক থাকে শুনলে অনেকেই চোখ কপালে তুলে তাকায়। সেটা কোনো বিষয় নয়। আমাদের এ পরীক্ষা শুরু হতো সকাল ৮টায়। আগে আমি মাদরাসায় রওয়ানা দিতাম, সকাল ৭:১৫ মিনিটে। তখন ক্লাস শুরু হতো, ৮:৩০ মিনিটে। আমি যাওয়ার প্রায় পৌনে ১ ঘন্টা পর…। আর এবার যেহেতু ৮টায় পরীক্ষার হলে ডুকতে হবে, তাই রওয়ানা হতাম ৭টায়। পরীক্ষার প্রথমদিন অর্থাৎ গত ২৮ তারিখে। সকালে বৃষ্টি হচ্ছিলো। আমি যখন ঘর থেকে বের হই তখনও তেমন বৃষ্টি হচ্ছিলো না। হালকা ঝির ঝির বৃষ্টি। তাই আমি এক্সামবোর্ডটি হাতে নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে রওয়ানা হলাম। হালকা বৃষ্টিতে হাঁটতে আলাদা একটা অনুভূতি হচ্ছিলো। আমি যখন ওয়ারলেস পার হই, তখন শুরু হয় জোরেশোরে বৃষ্টি। কি করবো কি করবো, তা ভেবেই কূল পাচ্ছিলাম না। এমনিতেই পরীক্ষার প্রথম দিন। দেরী করলে হয়তো আধ-ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তাই কোনো চিন্তা না করে বোর্ডটা মাথায় করেই দৌড়! বোর্ডটা প্লাস্টিকের হওয়ায় আরো সুবিধা হলো। এভাবেই প্রথমদিন পরীক্ষায় যাত্রা করলাম। এই স্মৃতি ভুলে যাওয়ার নয়।
দ্বিতীয়দিন থেকে সব স্বাভাবিক ছিল। এভাবে একেক করে লাগাতার ৭ দিন পরীক্ষা হলো। শুক্রবারেও পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তাও আবার একটা নয়। বরং দুইটা বিষয়ে। সেদিনকার পরীক্ষা আমার খানিকটা খারাপ হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্যদিন প্রায় একইরকম।
আমি আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে যেমনভাবে পরীক্ষায় ফাস্ট করার রেকর্ড আছে, তেমনই ফেল করার রেকর্ডও আছে। আমি ছাত্র হিসেবে একেবারে ভালোও নয়। আবার একেবারে খারাপও নয়। সাধারণত আমার সিরিয়াল থাকে মধ্যম স্থানে। সর্বপ্রথম যখন আমি ২০০৭/২০০৮ সালের দিকে স্কুলে পড়ি, তখন আমার রেজাল্ট ছিল। ফাস্ট ক্লাসে। প্রথমস্থান করতাম। কয়েকবার স্কুল থেকে গিফটও পেয়েছিলাম। তারপর যখন আমি মাদরাসায় আসি, তখনও এই প্রথমস্থান অনেকদিন বজায় ছিল। গত বছর সর্বপ্রথম দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় ফেল করি। তার আগে কখনো ফেল করেছি নাকি আমার মনে নেই। সাধারণত আমি জায়্যিদ জিদ্দান বা মধ্যমস্থান অর্জন করি পরীক্ষায়। এতে আমার কখনো আফসোস নেই। জীবনে কেউ যদি কখনো ফেল না করে, তাহলে ফেল করার পর কেমন অনুভূতি হয়, তা সে বুঝবে না। জীবনযুদ্ধে কেউ সর্বদা কখনো প্রথমস্থান পায় না। হোঁচট থেকেই হয়। আর এই হোঁচট খাওয়ার নামই হলো জীবন।