মোবাইলের আবিষ্কার, বদলে দেয়া ইতিহাস।

5 minute read

 

মোবাইলের আবিষ্কার

* আব্দুর রহমান আল হাসান *

মোবাইল ফোন, সেলুলার ফোন, সেলফোন, হ্যান্ড ফোন বা মুঠোফোন (ইংরেজি: Mobile phone তুর্কি:cep telefonu ) তারবিহীন টেলিফোন বিশেষ। মোবাইল অর্থ ভ্রাম্যমাণ বা “স্থানান্তরযোগ্য”। এই ফোন সহজে যেকোনও স্থানে বহন করা এবং ব্যবহার করা যায় বলে মোবাইল ফোন নামকরণ করা হয়েছে। মোবাইল অপারেটররা তাদের সেবা অঞ্চলকে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, পঞ্চভুজ বা ষড়ভুজ ইত্যাদি আকারের অনেকগুলো ক্ষেত্র বা সেলে বিভক্ত করে ফেলে। সাধারণত ষড়ভুজ আকৃতির সেলই বেশি দেখা যায়। এই প্রত্যেকটি অঞ্চলের মোবাইল সেবা সরবরাহ করা হয় কয়েকটি নেটওয়ার্ক স্টেশন (সচরাচর যেগুলোকে আমরা মোবাইল ফোন কোম্পানির এন্টেনা হিসেবে জানি) দিয়ে। নেটওয়ার্ক স্টেশনগুলো আবার সাধারণত সেলগুলোর প্রতিটি কোণে অবস্থান করে। এভাবে অনেকগুলো সেলে বিভক্ত করে সেবা প্রদান করার কারণেই এটি “সেলফোন” নামেও পরিচিত। মোবাইল ফোন বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বলে অনেক বড় ভৌগোলিক এলাকায় এটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে সংযোগ দিতে পারে । শুধু কথা বলাই নয়, আধুনিক মোবাইল ফোন দিয়ে আরো অনেক সেবা গ্রহণ করা যায়। এর উদাহরণ হচ্ছে খুদে বার্তা -এসএমএস বা টেক্সট মেসেজ সেবা, এমএমএস বা মাল্টিমিডিয়া মেসেজ সেবা, ই-মেইল সেবা, ইন্টারনেট সেবা, অবলোহিত আলো বা ইনফ্রারেড, ব্লুটুথ সেবা, ক্যামেরা, গেমিং, ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক ব্যবহারিক সফটওয়্যার ইত্যাদি। যেসব মোবাইল ফোন এইসব সেবা এবং কম্পিউটারের সাধারণ কিছু সুবিধা প্রদান করে, তাদেরকে স্মার্টফোন নামে ডাকা হয়। কিন্তু মোবাইল ফোন প্রথম তৈরি করেছিলেন কে? এতে প্রথম কথা বলেছিলেন কারা?

প্রথম মোবাইল ফোন তৈরি হয়েছিল ১৯৭৩ সালে, আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে – আর তা তৈরি করেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপার। তাকেই বলা হয় মোবাইল ফোনের জনক। মার্টিন কুপার কাজ করতেন তখনকার এক ছোট টেলিকম কোম্পানি মোটরোলায়। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল: এমন একদিন আসবে যখন সবার হাতেই তার নিজস্ব ফোন থাকবে, আর সেই ফোনে যে কোন সময় তার সাথে যোগাযোগ করা যাবে। বিবিসির লুইস হিদালগোকে মার্টিন কুপার বলছিলেন, সাধারণ মানুষের কাছে এ গল্প বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মতো শোনাবে। “কারণ, এর আগের একশ’ বছর ধরে টেলিফোন মানেই ছিল এমন একটা জিনিস – যা আমাদের কাজের টেবিল বা বাড়িতে একটা তারের সাথে যুক্ত। বলতে পারেন এটা একটা কুকুরের গলার শেকলের মতোই। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছিল, মানুষ আসলে মৌলিকভাবেই চলিষ্ণু এবং সে যেখানেই থাকুক না কেন – সবসময়ই অন্যদের সাথে যুক্ত থাকবে। কাজেই আমাদের সেই যন্ত্র তৈরি করতে হবে যা আগে কখনো তৈরি হয় নি। এবং ঠিক সেই জিনিসটাই আমরা বানিয়ে ফেললাম – মাত্র তিন মাসের মধ্যে। “অনেকেই বলেন, উনিশশ’ ষাটের দশকে স্টারট্রেক নামের টিভি শোর চরিত্ররা কমিউনিকেটর নামে যে ছোট হাতে ধরা জিনিসটি ব্যবহার করতেন – সেটাই মার্টিন কুপারকে মোবাইল ফোন বানাতে অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু মার্টিন বলেন, তা নয় – বরং আমেরিকান কমিক স্ট্রিপ ডিক ট্রেসি চরিত্রেরা পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগের জন্য হাতঘড়ির মতো যে টু ওয়ে রিস্ট রেডিও ব্যবহার করতেন – সেটা দেখেই আসলে তাদের মাথায় প্রথম মোবাইল ফোনের চিন্তাটা এসেছিল। “আগে যখন আপনি ফোন করতেন – তখন আপনার কলটা যাচ্ছে আসলে অন্য একটা জায়গায়, কিন্তু এখন মোবাইলে কল করলে তা ধরছেন একজন ব্যক্তি – যাকে আপনি ফোন করেছেন। জায়গাটা আর কোন ব্যাপার নয়। এটা একটা অত্যন্ত মৌলিক এবং গভীর পরিবর্তন। “মার্টিন কুপার এবং তার দল প্রথম হাতে-ধরা ফোনের প্রোটোটাইপটি উপস্থাপন করেছিলেন ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে, নিউইয়র্কের হিলটন হোটেলে। সেটা কিন্তু দেখতে ছিল একেবারেই অন্যরকম। সায়েন্স ফিকশনের কমিউনিকেটর বা এ যুগের মোবাইলের সাথে তার কোন মিলই ছিল না। সেই প্রথম মোবাইল ফোন ছিল ১০ ইঞ্চি লম্বা, দু ইঞ্চি চওড়া, এবং ৪ ইঞ্চি উঁচু। জিনিসটা ছিল অনেক ভারি। ওজন এক কিলোরও বেশি। মাত্র ২০ মিনিট কথা বললেই তার ব্যাটারি শেষ হয়ে যেতো। সেই ফোন দেখে লোকে হেসেছিল। কিন্তু তখনকার দিনে এর চেয়ে ভালো কিছু তৈরি করা সম্ভব ছিল না। মার্টিন কুপারকে মোটরোলা কোম্পানিতে একটা গল্প বলা হয়েছিল। “গল্পটা ছিল, এমন একদিন আসবে যে আপনার জন্ম হলেই আপনাকে একটা ফোন নম্বর দেয়া হবে, এবং সেই ফোন না ধরলে আপনি মারা যাবেন। তাই আমরা জানতাম যে একদিন সবারই একটা করে ফোন থাকবে – কিন্তু সেই ফোনে যে একটা সুপারকম্পিউটার থাকবে, তাতে ডিজিটাল ক্যামেরা এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে – তা আমরা কল্পনাই করতে পারিনি। কারণ এগুলোর কোন কিছুই ১৯৭৩ সালে ছিল না।“

সেই ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসের তিন তারিখে – নিউ ইয়র্কের সিক্সথ এভিনিউ থেকে মার্টিন কুপার মোবাইল ফোনে প্রথম কলটি করেছিলেন। ব্যাপারটা দেখতে তার সামনে উপস্থিত ছিলেন একজন সাংবাদিক। “সে ছিল নিউইয়র্কের একটি রেডিও চ্যানেলের একজন রিপোর্টার। আমরা রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। আমি আসলে আগে থেকে ভেবে রাখিনি যে কাকে ফোন করবো। আমি সাংবাদিকটিকে বললাম – এটিএন্ডটি কোম্পানিতে আমার পরিচিত একজন ইঞ্জিনিয়ার আছে, আমি তাকে ফোন করছি। তার নাম জোয়েল ইঙ্গল। “এটিএন্ডটি তখন আমেরিকার এমন কি সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানির একটি। আর কুপারের মোটরোলা ছিল একটা ছোট কোম্পানি। তাদের মধ্যেই হলো মোবাইল ফোনের প্রথম কথোপকথন। “আমি নাম্বারটি ডায়াল করলাম। কি আশ্চর্য ব্যাপার, জোয়েল নিজেই ফোন ধরলো। আমি বললাম, হাই জোয়েল, আমি মার্টিন কুপার বলছি। আমি তোমাকে ফোন করেছি একটা সেলফোন থেকে। একটা সত্যিকারের সেলফোন, একটি হাতে ধরা, ব্যক্তিগত ফোন – যা সাথে নিয়ে চলাফেরা করা যায়।” “ওপাশ থেকে জোয়েল কোন কথা বললো না। একটা নিরবতা।” আমার মনে হলো সে হয়তো দাঁত কিড়মিড় করছে। তবে জোয়েল ছিল খুবই ভদ্র। আজও সে বলে, আমার সেই ফোন কলটির কথা তার মনে নেই। আমি অবশ্য তাকে এজন্য দোষ দিই না। আপনিই বলুন, প্রথম সেলফোন কলের অন্যপ্রান্তে থাকতে আপনার কেমন লাগার কথা। “আসলে এটিএন্ডটিও তখন ভবিষ্যতের ফোন নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। সেলুলার টেকনোলজি নামে এক নতুন প্রযুক্তির সূচনা করেছিল তারাই। রেডিওর ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে একাধিক সেলের নেটওয়ার্কের মধ্যে বার্তাবিনিময় করার এ প্রযুক্তিই চলমান ফোন সম্ভব করেছিল।

অনেক মোবাইল ফোনই স্মার্ট ফোন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কথা বলার পাশাপাশি এ ধরনের ফোনগুলো অন্যান্য বিষয়েও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ই-মেইল, এসএমএস বা ক্ষুদেবার্তা, প্রেরণ ও গ্রহণ। ক্যালকুলেটর, মুদ্রা, সঙ্কেত বিষয়ক কার্যাবলী, ইন্টারনেট, গেমস খেলা, ছবি ও ভিডিও তোলা, ঘড়ির সময় দেখা, কথা রেকর্ড করা, ট্রেনের টিকিট বুকিং করা, বিদ্যুৎ/গ্যাস বিল দেয়া ইত্যাদি। টাকার আদানপ্রদানও মোবাইলে করা যায়।

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন;

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন প্রথম চালু হয় ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে। হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল) ঢাকা শহরে AMPS মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন সেবা শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৪টি মোবাইল ফোন কোম্পানী রয়েছে। এদের মধ্যে ৪টি জিএসএম তবে একটি সিডিএমএ প্রযুক্তির মোবাইল সেবা দিয়ে থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে সব জিএসএম মোবাইল কোম্পানি ২০১৩ সাল থেকে তৃতীয় প্রজন্মের ৩জি সেবা দেওয়া শুরু করেছে। মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে একমাত্র টেলিটক দেশিয় কোম্পানি। বর্তমানে রবি ও এয়ারটেল একীভূত হয়ে রবি হবার কাজ করছে। দেশে মোবাইল নম্বর গুলো ০১ দিয়ে শুরু। কান্ট্রি কোড সহ নম্বর হয় +৮৮০১********* । কান্ট্রি কোড ব্যতীত মোট ১১ ডিজিটের নম্বর ব্যবস্থা চালু এখন। মোবাইল কোম্পানীগুলো হল:

সিটিসেল কোড – ০১১(সিডিএমএ) [বর্তমানে বন্ধ]

রবি কোড -০১৮(পূর্ব নাম একটেল)

এয়ারটেল (বাংলাদেশ) কোড – ০১৬(ওয়ারিদকে কিনে নেয় )- বর্তমানে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের পরিচালিত একটি স্বাধীন ব্যান্ড, যেটি রবি আজিয়াটা লিমিটেডের লাইসেন্সের অধীনে পরিচালিত।

গ্রামীণফোন কোড -০১৭, ০১৩

বাংলালিংক কোড -০১৯, ০১৪ (সেবাওয়ার্ল্ডকে কিনে নেয়)

টেলিটক কোড -০১৫

#buttons=(আমি সম্মত !) #days=(20)

আসসালামু আলাইকুম, আশা করি আপনি ভালো আছেন। আমার সম্পর্কে আরো জানুনLearn More
Accept !