শিশুরা কি শিখছে? আপনি জানেন?

0
আব্দুর রহমান আল হাসান

আজকের শিশু, আগামীর ভবিষ্যত। কথাটা সত্য। আজ যেই শিশু জন্ম হয়, অদূর ভবিষ্যতে তার কর্ম দক্ষতায় দুনিয়া উপকৃত হবে। সমাজ উপকৃত হবে। আজকের শিশুকে যদি আপনি সঠিক উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারেন তাহলে খুব সহজেই তার চিন্তা-চেতনার দরজা খুলে দিতে পারবেন। তাকে এক নতুন পৃথিবীতে বিচরণের স্বাদ উপভোগ করাতে পারবেন। কিন্তু নির্মম সত্য হলো, শিশুরা আজ বড্ড অসহায়।

কিভাবে সেটা একটু বলি। একটি শিশু সারাদিন কি করে? তা কি কখনো আপনি মনিটরিং করেছেন? আপনি হয়তো আমার এই কথার প্রতিবাদ জানাতে পারেন, শিশুকে কেন মনিটরিং করবো? আচ্ছা, আপনি জানান বা না জানান আপনার মনিটরিং করতেই হবে। কেন তা বলছি।

আপনার বাসায় নিশ্চয় স্মার্টফোন বা টিভি অথবা ল্যাপটপ আছে। আর তাতে আছে, ইন্টারনেটের অদ্ভূত এক জগত। যা জাফর ইকবালের ভাষায় ঘরের মধ্যে আরেকটা জানালা। যেটা দিয়ে পৃথিবীর যে কোনো দিকে উঁকি মারা যায়। সে যাই হোক। আপনি হয়তো ভাবেন, আপনার শিশু গেম খেলছে বা কার্টুন দেখছে। কিন্তু আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না, সে কি করে?

মাসখানেক আগে একটা আট সাত বছরের বাচ্চা আমাকে বললো, তার একজন খেলার সাথী তাকে fuck বলেছে। আর যে বলেছে, তার বয়স বড়জোর আট বছর। অর্থাৎ তারা উভয়ই সমবয়সী। আমি সেদিন এতটাই অবাক হয়েছিলাম যে, ততটা অবাক হয়তো আমি আমাদের বাড়ি কেনার দিনও হই নি। এই পিচ্চি বলে কি? আরেকদিন আবার এক অভিযোগ।

আরেকটা বাচ্চা তাকে মিডল ফিঙ্গার দেখিয়েছে। বললাম যে এতে কি হয়েছে। তখন বললো, এই চিহ্ন দ্বারা খারাপ একটা জিনিষ বুঝানো হয়। তখনো অবাক হয়েছিলাম। কারণ, এই ছেলের বয়সে থাকতে আমরা এসব চিহ্ন তো দূরের কথা, আরো অনেক কিছুই বুঝতাম না।

আরেকদিন একটা বাচ্চা আমাকে বললো, 69 মানে কি? আমি স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলাম, উনষাট। সে হাসতে হাসতে বললো, হয় নি। এটার মানেটা খুব খারাপ। বললাম, কই দেখেছ? বললো, ইন্টারনেটে। আমি বেক্কলের মতো ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে বললাম। তারপরের ইতিহাস আর টেনে লাভ নেই। এখনো আমি এই সংখ্যার মানেই জানলাম না। অথচ এই বাচ্চা আট বছর বয়সেই এতটা জানে।

আরেকদিন অবাক হয়েছিলাম ছোট একটা বাচ্চার মুখে বিটিএস এর মতো জঘন্য একটা ব্রান্ডের নাম শুনে। আবার দেখি সে নাকি ফ্যান। ওরে রে। কচুঁগাছে ফাঁসি দিয়া মরা উচিৎ।

এখন মূল কথায় আছি। এই শিশুদের অধঃপতন কেন? মোটাদাগে দায়ী হলো, ইন্টারনেট। কারণ, ইন্টারনেট হলো এমন একটি ফ্লাটফর্ম যাতে নিজের মনমতো তথ্য পাওয়া যায়। আরো দায়ী বাংলাদেশে ডিজিটালের নামে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। আর ভিপিএন সার্ভার তো আছেই।

এখন কথা হলো, তাকে কিভাবে গাইড করবেন? আমি যেহেতু বাবা নই তাই এ বিষয়ে আমার উপদেশ দেয়া খাঁটে না। তাই ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে কিছু তথ্য উপস্থাপন করছি।

* প্রথমেই, শিশুকে বাধ্য হয়ে চলার শিক্ষা দিতে হবে এবং সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে।

* বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটদের ভালোবাসার শিক্ষা দিতে হবে। এসব বিষয় সম্পর্কে উপদেশের মতো শিক্ষা না দিয়ে বাস্তবে করে দেখাতে হবে। পাশাপাশি তাকে সাহাবাদের গল্প ও বড়দের গল্প শুনিয়ে উৎসাহ প্রদান করতে হবে।

* শিশুরা কোনো ভুল করলে তাদেরকে প্রথমে বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে পরে বকা দিতে পারেন। তবে বকা দেওয়ার সময় শিশুকে কোনো রকমের আজে বাজে বা অপমানজনক শব্দ ব্যবহার করা ঠিক নয়।

* বাসায় অতিথি এলে শিশুকে তাদের সঙ্গে কথা বলতে ও সময় কাটাতে উৎসাহিত করুন। এতে ছোট থেকেই তার মধ্যে সামাজিকতার বোধ জেগে উঠবে।

* শিশুর সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করুন। তাহলে সে আপনার কাছ থেকে কোনো কিছু লুকাবে না। এবং সকল কথাই সে সাদরে গ্রহণ করবে।

* শিশুরা বাইরে খেলতে গেলে বা স্কুলে অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে মেলামেশা করার কারণে নানা ধরনের বাজে শব্দ ও ব্যবহার শিখতে পারে। তাই শিশু কার সঙ্গে মেলামেশা করছে সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাছাড়া শিশুর আচার আচরণে খারাপ কোনো পরিবর্তন দেখলে তাকে শোধরানোর চেষ্টা করতে হবে।

* শিশুর সঙ্গে সব সময় সত্য কথা বলুন। তাকে সত্য বলতে উৎসাহিত করুন। কোনো ভুল করে যদি সে স্বীকার করে তাহলে কড়া শাসন না করে বুঝিয়ে বলুন ও ভবিষ্যতে যেন এমন কাজ না করে সে বিষয়ে সাবধান করে দিন।

* দিনের নির্দিষ্ট একটি সময় বেছে নিন কেবল শিশুর জন্য। এই সময় অন্য কোনো কাজ না করে তার সঙ্গে সময় কাটান। তার সঙ্গে গল্প করুন, আনন্দ করুন মোটকথা সম্পূর্ণ মনোযোগ তার দিকে দিন। ফলে সে বুঝবে আপনার কাছে তার গুরুত্ব আছে। তখন সেও আপনার প্রতিটি কথা ও মানসিক অবস্থার গুরুত্ব দিবে।

* শিশুকে ডিভাইস থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।

* শিশুকে ইন্টারনেটের নষ্টামি থেকে দূরে রাখুন। গান শোন, ফাইটিং দেখা, কমেডি দেখা থেকে বিরত রাখুন।

শিশুকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে তার সুন্দর ব্যবহার ও সৎ চরিত্র বিকাশে সহায়তা করা উচিত। এতে শিশু বর্তমান ও ভবিষ্যত সময়েও বিপথগামী হবে না। তাই শিশুর সঠিক বিকাশে ছোট থেকেই সহায়তা করা উচিত। তাহলেই তারা একদিন আলো ছড়াবে এই সমাজে।  

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)

#buttons=(আমি সম্মত !) #days=(20)

আসসালামু আলাইকুম, আশা করি আপনি ভালো আছেন। আমার সম্পর্কে আরো জানুনLearn More
Accept !