পৃথিবীতে যত ভালো কাজ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো মানব সেবা করা।
ইসলামের প্রবর্তক নবী সা. আমাদের এই কাজে উৎসাহিত করে গিয়েছেন। যারা ইতিহাস পড়েছেন,
তারা তো জানেনই। যারা জানেন না, তাদের জন্য আবার বলছি। নবী সা. যখন হিজরত করে মদীনায়
আসলেন এরপর মক্কা থেকে অনেক সাহাবারাও হিজরত করে মদীনায় চলে আসলো। আর যারা আসলো, তাদের
মধ্যে এমন অনেক সাহাবা ছিলেন যাদের মক্কায় সম্পদের পাহাড় ছিল। কিন্তু মদীনায় হিজরত
করে আসার পর তার নিকট কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। তার সম্পদ দখল করে নিয়েছিল, মক্কার কাফেররা।
তখন নবী সা. মক্কা থেকে হিজরত করে আসা ব্যক্তিদের সাথে মদীনার কোনো
একজনের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে দিতেন। যাতে উভয় ব্যক্তিই উপকারী হয়। এজন্য
মক্কা থেকে আসা সাহাবাদের বলা হতো, মুহাজির এবং মদীনায় থাকা সাহাবাদের বলা হতো আনসার।
এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনটা কেমন ছিল, সেটা একটু উল্লেখ করছি এখানে।
একবার জনৈক মুহাজির সাহাবার সাথে অন্য একজন আনসারী সাহাবীর পরিচয়
করিয়ে দেয়া হলো। তখন আনসারি সাহাবী মুহাজির সাহাবাকে বললেন, আমার এত এত পরিমাণ সম্পদ
রয়েছে, তার থেকে অর্ধেক তুমি নিয়ে নাও। আমার দুইজন স্ত্রী রয়েছে, তাদের থেকে একজনকে তুমি নিয়ে নাও। আমি তাকে তালাক দিয়ে দিব।
এমন অসংখ্য ঘটনাগুলো সিরাতের কিতাব ও ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ আছে।
সেই নবীর উম্মত আমরা। নবী সা. ছিলেন কোমল হৃদয়ের অধিকারী। এ জন্য নবী সা. কখনো তার
ঘরে সম্পদ জমিয়ে রাখেন নি। যখনই তার নিকট কোনো সম্পদ বা অর্থকড়ি আসতো, সাথে সাথে তিনি
তা দান করে দিতেন।
আমরাও দান করি। কিন্তু আমাদের দান নবীজির সমকক্ষ কখনো হবে না, এটা
সত্যি। কিন্তু আমরা তো দানের সময় বিনয় অবলম্বন করতে পারি, তাই না? আমাদের দেশে দুর্যোগের
সময় অনেক ব্যক্তি, অনেক ফাউন্ডেশন, অনেক সংগঠন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। এটা অত্যন্ত
আনন্দদায়ক সংবাদ বটে। কিন্তু এদের মধ্য থেকে কিছু মানবরুপী পশুর কারণে পুরো কর্মের
উপরই প্রশ্ন চলে আসে।
গতকালকের একটা সংবাদ হঠাৎ চোখে পড়ে। সরকারি অনুদানে হোক বা ব্যক্তি
উদ্যোগে হোক এক চেয়ারম্যান সাহেব ত্রান বিতরণ করছেন। সে সময় তার নিকট একজন একটু বেশি
চাওয়ায় তাকে সে চড়-থাপ্পর মারে। এরপর এক বৃদ্ধ ত্রান নেয়ার জন্য এগিয়ে আসলে তারে ডাক্কা
দিয়ে সরিয়ে দেয়। এ জিনিষটা একজন সাধারণ জনগণ হিসেবে কেউ ই মেনে নিতে পারে নি। ইন্টারনেটে
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই নিন্দার ঝড় বইছে। এটা কোনো ফ্যাক্ট নয়। ফ্যাক্ট হলো, সে
কোন সাহসে এমন কাজ করলো?
আল্লাহই জানে, সে ধর্মীয় বিষয় কেমন পালন করে? এখানে আমি যেটা আলোকপাত
করতে চেয়েছি, ত্রান দেয়া বা কাউকে সাহায্য করা মানে তো এই নয় যে, আমি অনেক বড় কিছু
করে ফেলেছি।
উল্টো ত্রান নেয়া ব্যক্তিটি ত্রান নিয়ে আমাদের গুনাহের কাজ থেকে
বাচিঁয়েছেন। কিভাবে সেটা একটু বলি।
দেশের সম্পদের পরিমাণ তো আপনারা জানেন। সাথে নিশ্চয়ই এটাও জানেন,
সরকারিভাবে প্রত্যেকের মাথাপিছু ঋণ কত। ৯৫ হাজার ৬০০ টাকা করে। যা তিন বছর আগে ছিল
২২ হাজার টাকা করে। এত টাকা মাথাপিছু ঋণ কেন, জানেন?
সরকারি কর্মীদের দুর্নীতি ও টাকা আত্মসাৎ। আমরা করোনাকালে দেখেছিলাম,
চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ত্রানের তেল ও চাউলের বস্তা নিজের আত্মীয়-স্বজনের জন্য ঘরের
মাটির নিচে লুকিয়ে রাখতো। তাহলে বুঝতেই পারছেন, এই সরকার ও সরকারি দল এবং তাদের দায়িত্বশীলরা
কেমন?
এই ধরণের উল্টাপাল্টা করে যে তারা জনগণের কত অভিশাপ কুড়াচ্ছে, তার
কোনো ইয়ত্তা নেই। ওহ দূরু! কাকে কি বলি? তাদের মহানবী তো ইতিহাসক্ষেত সেই ব্যক্তিটি।
যাই হোক ভাই, আপনাগো নবী যিনিই হোন না কেন, তাতে আমার কোনো আপত্তি নাই। তবে জনগণের
টাকা মেরে আবার জনগণের টাকা ফেরৎ দেয়ার সময় যদি জনগণের গায়ে হাত তোলেন বা তাদেরকে ডাক্কা
দিয়ে সরিয়ে দেয়ার দুঃসাহস করেন তাহলে আপনার কপালে শনি আছে, এটা ভেবে রাইখেন।
আজ এ পর্যন্তই। ও আরেকটা কথা, আজকে কিন্তু ডলার দাম ৯২.৮৩ টাকা করে। আহা! উন্নয়ন। সর্বশেষে ওবায়দুল কাদের সাহেবের একটা লাইন দিয়ে শেষ করি, শেখ হাসিনা নিজের টাকায় পদ্মাসেতু করেছে। বলেন, সুবহানাল্লাহ!