* আব্দুর রহমান আল হাসান *
মুসলমান সমাজের মধ্যে যতগুলো দল বা উপদল আছে, এর মধ্যে শিয়ারা বিভিন্ন কারণে আলোচনাযোগ্য। শিয়াদের আত্মপ্রকাশ হযরত আলী রা. এর যুগেই। মুসলমানদের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান রা. এর শাহাদাত বরণের পর মুসলিম বিশ্বে যেই বিভক্তি এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল, তার মূলেও ছিল এই শিয়ারা। এই শিয়ারা আলী রা. এর পরে আব্বাসী খেলাফতকালে নিজেরা শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। যেটাকে অনেকেই ফাতেমী সাম্রাজ্য নামে অতিবাহিত করে থাকেন। আমরা বিস্তারিত এই বিষয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
শিয়াদের পরিচয়:
শিয়া বা الشيعة শব্দটি আরবী শব্দ। আভিধানিক অর্থ, অনুসারী বা সহযোগী। প্রাচীন আরবে এই শব্দটি এই অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। পরবর্তীতে এটি একটি নির্দিষ্ট জাতি-গোষ্ঠীর জন্য খাছ হয়ে যায়। পবিত্র কুরআনেও আল্লাহ তা’আলা এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কুরআনের সূরা সাফফাত এর ৮৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা উল্লেখ করেন,
وَ اِنَّ مِنۡ شِیۡعَتِهٖ لَاِبۡرٰهِیۡمَ
অর্থ, নিশ্চয় ইবরাহীম তার দ্বীনের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত
এমন আরো অনেক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা দল বা অনুসারী বুঝাতে এই শিয়া শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
শিয়া শব্দের পারিভাষিক অর্থ, যেহেতু বর্তমানে এটি একটি নির্দিষ্ট দলের নাম তাই এটিকে সেভাবেই ব্যাখ্যা করা উচিৎ। শিয়া সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা মনে করে থাকেন, কোনো নবীর জন্য ইমাম বা নেতা নির্বাচনের বিষয়টি ভুলে যাওয়া বা তা জনগণের হাতে অর্পন করে যাওয়া জায়েজ নয়। বরং তার জন্য পরবর্তী ইমাম নির্বাচন করে যাওয়া আবশ্যক।
আল্লামা আবুল হাসান আশআরী রহ. বলেন, শিয়া বলা হয় তাদেরকে যারা হযরত আলী রা. কে অনুসরণ করে এবং তাকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে উর্ধ্বে মনে করে।
শিয়ারা সর্বসম্মতিক্রমে এই মত পেশ করে থাকে যে, “!ইমাম বা নেতৃত্ব এমন কোনো বিষয় নয়, যার দিকে সাধারণ মানুষের নযর দিতে হবে বা হস্তক্ষেপ করতে হবে। বরং ইমামত হচ্ছে দ্বীনের ভিত্তি। আর কোনো নবীর জন্য ইমাম নির্বাচন করাটা ভুলে যাওয়া বা তা জনগণের হাতে ছেড়ে যাওয়া জায়েজ নয়। বরং তার জন্য জনগণের ইমাম নির্বাচন করা আবশ্যক। নবীর পরবর্তী ঈমাম ছোট বড় যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত থাকবে।” (নাউযুবিল্লাহ)
রাফেযীদের পরিচয়:
শিয়া সম্প্রদায়ের পর যেই সম্প্রদায়ের কথা সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে, সেটা হলো রাফেযী। এই দলটি মূলত শিয়া সম্প্রদায়ের উপদলগুলো মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট দল। রাফেযী শব্দের অর্থ হলো, পরিত্যাগ করা বা বর্জন করা। শিয়াদের এই দলের ব্যক্তিদের রাফেযী বা বর্জনকারী বলার কারণ হলো, তারা হযরত যায়েদ বিন আলী রা. কে পরিত্যাগ করেছে।
হযরত যায়েদ বিন আলী রা. কে তাদের পরিত্যাগ করার একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা আছে। তা হলো এমন, একবার শিয়ারা তার হাতে বাইয়াত গ্রহন করে। এরপর তাদের মধ্য থেকে একদল যায়েদ বিন আলী রা. কে বললো, আপনি তো হযরত আবু বকর রা. ও হযরত ওমর রা. কে মেনে থাকেন। তাই আপনি তাদের থেকে বিমুখ হন এবং তাদের পরিত্যাগ করুন। তখন হযরত যায়েদ বিন আলী রা. তাদেরকে বললেন, তারা তো আমার দাদার অর্থাৎ আলী রা. এর সহযোগী ছিলেন। তাই আমার তাদের থেকে বিমুখ হওয়া বা তাদের পরিত্যাগ করা সম্ভব নয়।
তখন উক্ত শিয়ারা তাকে পরিত্যাগ করে। এখান থেকেই শিয়াদের উক্ত দলের নাম রাফেযী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আহমাদ রহ. বলেন, একবার আমি আমার পিতা হযরত আহমাদ বিন হাম্বল রহ. কে জিজ্ঞাসা করা হলো, রাফেযী কারা? তিনি বললেন, যারা হযরত আবু বকর রা. ও হযরত ওমর রা. কে গালি দেয় এবং ভর্ৎসনা করে।
এখানে একটা কথা উল্লেখযোগ্য যে, অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, যায়েদ বিন আলী রা. মূলত কে ছিলেন? তিনি হলেন আলী রা. এর পুত্র, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাতি হযরত হুসাইন রা. এর এর নাতি। হুসাইন রা. এর একজন পুত্র ছিলেন। নাম আলী অথবা জয়নুল আবেদীন নামে পরিচিত। এই আলী রহ. এর পুত্র ছিলেন যায়েদ রহ.।
এতুটুকুই ছিল শিয়া এবং রাফেযীদের পরিচয়। পরবর্তীতে আমরা শিয়া সম্প্রদায়ের সূচনা নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ।