প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান

প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান
আব্দুর রহমান আল হাসান

জন্ম ও পরিবার: প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান ১৯২৬ সালের ২৬ অক্টোবর তুরস্কের সিনপ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মোহাম্মদ সাবরি এরবাকান। ছিলেন তুরস্ক সরকারের বিচারপতি। মায়ের নাম খামের। শিক্ষাজীবন: কায়সেরির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। সেরা ফলাফল অর্জনের মাধ্যমে তিনি তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন তুরস্কের সর্ববৃহৎ কলেজ ইস্তাম্বুল বয়েজ কলেজ থেকে। সমকালীন শিক্ষার পাশাপাশি তিনি তাঁর উস্তাজ, সেসময়ের প্রখ্যাত আলেম মেহমেদ জাহিদ কতকুর কাছ থেকে ইসলামী শিক্ষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। ১৯৪৩ সালে উচ্চমাধ্যমিকে অসাধারণ ফলাফল অর্জন করে ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কর্ম ও অবদান: ১৯৪৮ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে রেকর্ড সংখ্যক নাম্বার পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং স্নাতক শেষ হতে না হতেই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ডিপার্টমেন্টে শিক্ষানবিশ ও সহকারী প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তুরস্কের মোটর উৎপাদনের জন্য তিনি ২৫০টি মোটরের সমন্বয়ে নতুন একটি মোটর তৈরি করেন এবং সেটির উপর তিনি তার PhD এর থিসিস তৈরি করেন। তাঁর থিসিস বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ পেলে ১৯৫১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে জার্মানীর বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় Aachen Technical University-তে গবেষণার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে তিনি জার্মান সেনাবাহিনীর জন্য প্রতিষ্ঠিত DVL গবেষণা কেন্দ্রে সেসময়ের বিখ্যাত প্রফেসর স্কিমিদ (Schimidt)-এর সাথে কাজ করেন। দেশে ফিরে মাত্র ২৭ বছর বয়সে ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। নাজমুদ্দিন এরবাকানের "তুরস্কের প্রয়োজনীয় সব যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তুরস্কের মাটিতে নিজেদের প্রতিষ্ঠানেই উৎপন্ন হবে" এই স্লোগানকে সামনে রেখে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানায় দেশপ্রেমিক ২০০ জন উদ্যোক্তার অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তিনি গুমুশ ইঞ্জিন ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠা করেন। রাজনৈতিক জীবন ও উম্মাহর স্বার্থে কাজঃ তিনি তাঁর উস্তাজ মেহমেদ জাহিদ কতকুর পরামর্শে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন মিল্লি গুরুশ আন্দোলন।

প্রফেসর. ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান। একটি নাম। একটি আন্দোলন। একটি ইতিহাস। শুধুমাত্র এই নামের মধ্যেই যেন পুরো একটি আন্দোলনের অবয়ব ফুটে উঠে। কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে শৈশব কাটানো ককেশাসের ইমাম শেখ শামিলের বংশধর প্রফেসর এরবাকানের গড়ে তোলা বিপ্লবী আন্দোলন “মিল্লি গুরুশ”-এর তুফানে উত্তাল হয়ে উঠেছিল কৃষ্ণ সাগর ও ভূমধ্যসাগরের পাশে গড়ে উঠা দীর্ঘ ৬০০ বছর সমগ্র দুনিয়াকে শাসনকারী উসমানীয় সাম্রাজ্যের মীরাস তুরস্ক।১৯৬৯ সালে এরতুরুলের এককালের রাজধানী কোনিয়া থেকে যাত্রাকারী তুরস্কের ইসলামী আন্দোলন মিল্লি গুরুশ পাশ্চাত্যের ভিত্তিকেই নাড়িয়ে দেয়। পুরো পাশ্চাত্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করে যেতে থাকে একের পর এক অবিশ্বাস্য সব কাজ। সাইপ্রাস বিজয় থেকে গাজাতে সৈন্য প্রেরণের ঘোষণা; মরো, ফিলিস্তিনের সংগ্রামে প্রত্যক্ষ সহায়তা থেকে শুরু করে ইউরোপের বুকে একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বসনিয়াকে স্বাধীনতা প্রদান, কী করেনি মিল্লি গুরুশ। আর এই আন্দোলনের সর্বাগ্রে যার নাম আসে তিনিই হচ্ছেন প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান। ৭০, ৮০ এবং ৯০ এর দশকে তুরস্কে যে ইসলামী মূল্যবোধের প্রবল ঝড় শুরু হয়েছিল তার পুরো অবদান ছিল প্রফেসর এরবাকানের। একক এই ব্যক্তির কারণে তুরস্ক দেখেছিল তার প্রজাতান্ত্রিক ইতিহাসের অবিশ্বাস্য এক শিল্প বিপ্লব, যার উপর ভিত্তি করে বর্তমান আধুনিক তুরস্ককে আমরা প্রত্যক্ষ করছি। বর্তমান তুরস্কের যেসকল ফ্যাক্টরী নিয়ে মুসলিম দুনিয়া গর্ব করে তার সবকটিই তৈরী করেছিলেন তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের এই প্রতিষ্ঠাতা।

নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রস্তাবক এবং মহান এই মুজাহিদের ভয়ে সর্বদা তটস্থ ছিল সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ও ইসরাঈল। তাইতো একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারী করে, কারাগারে প্রেরণ করে দমিয়ে দিতে চেয়েছিল মহান এই মুজাহিদকে। যার দরুণ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ১৫ বছরই ছিলেন জেলের অন্ধ কুঠুরীতে অথবা ছিলেন গৃহবন্দী। কিন্তু যে ২৫ বছর রাজনীতিতে ছিলেন, সে বছরগুলোতে তার চিন্তা ও আদর্শ তুরস্কের সাথে সাথে পৃথিবীর ইতিহাসের গতিপথও পালটে দিয়েছে। মুসলিমদের দিয়েছে তাদের হারিয়ে যাওয়া জিহাদী জযবা। তাইতো ৭০ এর দশকে সিআইএ এর এক সময়ের মধ্যপ্রাচ্যের চীফ তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধানকে বলেছিল- “তোমাদের দেশে শুধুমাত্র একজন লোক রয়েছেন যার কারণে আমাদের সকল পরিকল্পনা নস্যাত হয়ে যাচ্ছে। তা নাহলে তোমাদের রাজনীতিবীদদেরকে বাতাসের মধ্যে নাচানো কোন ব্যাপারই ছিল না। সেই ব্যক্তি হচ্ছেন প্রফেসর এরবাকান”। প্রফেসর এরবাকানের চিন্তা-আদর্শ এবং মনোমুগ্ধকর কাজে বিমোহিত হয়ে শেষ পর্যন্ত তুরস্কের কট্টর সেক্যুলার নেতা ও আতাতুর্কের পর দীর্ঘ ১২ বছর ক্ষমতায় আরোহণকারী ইসমেত ইনোনুও আফসোস করে বলতে বাধ্য হয়েছিল- “তুরস্কের প্রজাতান্ত্রিক ইতিহাসে সত্যিকার অর্থে একজন মানুষই গড়ে উঠেছিল, অথচ সেই ব্যক্তিই কিনা তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা”।

সুত্র; ইন্টারনেট

#buttons=(আমি সম্মত !) #days=(20)

আসসালামু আলাইকুম, আশা করি আপনি ভালো আছেন। আমার সম্পর্কে আরো জানুনLearn More
Accept !