আব্দুর রহমান আল হাসান
মাবরুর মসজিদে বসে আছে। কেন যেন নিজেকে সে শান্ত রাখতে পারছে না। হঠাৎ করেই একটা অস্বস্তিকর পরিবেশে সে ফেঁসে গিয়েছে। এভাবে যে সে কখনো লস খাবে, কল্পনা করে নি। গতমাসে সে আর তার মামাতো ভাই সাব্বির মিলে ছোটোখাঁটো একটা বিজনেস শুরু করে। শুরুতে ভালোভাবেই চলছিল এটি। বাঁধ সাজে একদিন তার দোকানে এলাকার মাতবরের ছেলে আসার পর। নাম তার জীবন তালুকদার। তার বাবা গত ১০ বছর ধরে কয়েকবার ইলেকশনে গ্রামের মেম্বার পদে দাঁড়িয়েছে। একবারও জিততে পারে নি। তাই তিনি এবার চালাকি করে ঘুষের মাধ্যমে ভোটে জিতেছেন। এরপর থেকে সারা গ্রামে তার আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশিরা প্রভাব খাটাতে লাগলো। কিছুদিন আগে মাবরুরের দোকানে মাতবরের ছোট ছেলে জীবন তালুকদার আসে। সাথে তার বখাটে বন্ধু-বান্ধবও ছিল। এসেই দোকানের অনেক জিনিষ না বলেই নিয়ে চলে যায়। মাবরুরের মামাতো ভাই সাব্বির তাদের কিছু বলতে যাচ্ছিল, তখনই একটা বখাটে ছেলে তাকে ডাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। বলে,
আমরা কার লোক জানিস, মাতবরের লোক। কথাটা মনে রাখবি। এভাবে সেদিন গেল। বখাটেদের এভাবে জিনিষপত্র নেয়ায় সেদিন তাদের সাড়ে সাত হাজার টাকা লস হয়। মাতবরের লোকদের উৎপাত এতে কমে নি। পরেরদিন তারা আবার দোকানে এসে হাজির। আরো অনেক জিনিষপত্র তারা জোর করে নিয়ে চলে যায়। প্রতিদিন এভাবে তারা অন্যায়ভাবে দোকানের জিনিষ নিয়ে যেতে থাকে। মাবরুর একবার ওসিকে বলার পর কোনো লাভ হয় নি। উল্টো তিনি বললেন, নতুন ক্ষমতায় আসলে সবাই এমনই হয়।
২
জীবন তালুকদার তার বখাটে বন্ধুদের নিয়ে গ্রামের পূর্বপাশে মাস্টারবাড়িতে আড্ডা দিচ্ছে। এই বাড়িতে গত বছর কোনো লোক বাস করে নি। কামাল মাস্টার ছয় বছর আগে মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী-পুত্ররা এই বাড়ি ছেড়ে চাপাইনবাবগঞ্জ চলে যায়। তারপর থেকে মাস্টারের ছেলে বছরে এক-দুইবার এসে বাড়িটি দেখে যায়। তারা চাপাইনবাবগঞ্জ গেছে কারণ,
তাদের নানাবাড়ি সেখানে। মাস্টারের স্ত্রীর শেষ ইচ্ছে, জীবনের শেষ দিনগুলো তার বাপের বাড়িতেই কাটাবে। হয়তো তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছেলেরা আবার এই গ্রামে চলে আসবে।
জীবন তালুকদার তার এক বন্ধুকে বললো, কালকে রাসেল মিয়ার দোকান সাবাড় করে দিবি। আব্বায় নির্বাচনের সময় তারে বলছিল, আব্বার পক্ষে থাকতে। কিন্তু এই গাধায় থাকে নি। মান্নান সাবের পক্ষে রাসেল মিয়ায় ভোট দেয়। জীবনের বন্ধু প্রবীর বললো, চিন্তা করিস না দোস্ত। খালি কালকে সকালটা হতে দে।
কাউসার আর জুনায়েদ। গ্রামের লোকমান চাচার ভাতিজা তারা। বাড়ির উঠানে হাওয়ার বল দিয়ে খেলছিল। এদিকে সন্ধা হয়ে আসছে। কাউসারের মা তাদের ঘরে আসার জন্য ডাক দিলো। তারাও সেয়ানা। ডাক শুনে বললো, আরেকটু খেলি। এই বলে জুনায়েদ বলটাকে জোরে লাথি মারলো। বলটা গিয়ে মাস্টারবাড়ির পাশে গিয়ে পড়লো। কাউসারের মা বললো, বললাম ঘরে আসতে। এখন বলটাই একেবারে মাস্টারের বাড়িতে মেলা মারছে। কাউসার বললো, আম্মু বলটা এনে দাও না! অ্যাঁ.... অ্যাঁ...... অ্যাঁ......। তার মা বল আনতে সেখানে গেল।
তখন মাতবরের ছেলে তার বন্ধুদের নিয়ে মাস্টারবাড়িতে আড্ডা দিচ্ছিল। কাউসারের মা যখন বলটা উঠাতে গেলেন, তখন শুনলেন, জীবন তালুকদার একজনকে বলছে, আগামীকাল রাসেল মিয়ার দোকান সাবাড় করে দিবি। কাউসারের আম্মু এটা শুনে আতঁকে উঠলেন। তাড়াতাড়ি বলটা নিয়ে বাড়ি চলে এলেন। এদিকে ক্রমেই সন্ধা হয়ে যাচ্ছে। লোকমান চাচা তখন উঠানে বসে ছিলেন। এত হন্তদন্ত হয়ে বল নিয়ে আসতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, কি হয়েছে? কাউসারের মা লোকমান চাচাকে ঘটনাটা বললেন। শুনে লোকমান চাচা হতাশ গলায় বললেন, নাহ্ এই মাতবরের পোলাডা আর ভালো হইলো না। এদেরকে কোলে-পিঠে করে বড় করেছি। আর এহন তারা ভালো আচরণ ভুলে গেছে। তারপর তিনি কাউসারের মাকে বললেন, তুমি তাদেরকে নিয়া ঘরে যাও। আমি বাজারে যাচ্ছি। আসতে হয়তো ইশার সময় হবে। এই বলে তিনি উঠলেন।
মাগরিবের নামাজ পড়ে লোকমান চাচা রাসেল মিয়ার দোকানে বসলেন। দোকানটা সাধারণ একটা মুদি দোকান। এখানে চা-বিস্কুট এবং চিপস, কোমল পানীয় পাওয়া যায়। রাসেল মিয়ার দোকানে লোকমান চাচা বসলেই সে লোকমান চাচাকে কড়া লিকার দিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে দেয়। আজও এর ব্যাতিক্রম ঘটে নি। লোকমান চাচা তাকে চুপি চুপি বললেন, তোমার সাথে আমার পার্সোনাল কথা আছে। রাসেল মিয়া ভাবলো, হঠাৎ আবার লোকমান চাচা কি বলবেন নাকি তার মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলবেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই দোকান ফাঁকা হয়ে গেল। অন্যদিকে একটু পর পর বিজলী চমকাচ্ছে। হয়তো আজ বৃষ্টি আসবে। গ্রামে পাঁচদিন ধরে খুব গরম পড়ছে। কৃষকরা এই গরমে বেশিক্ষণ কাজ করতে চায় না। তারপরও পেটের তাগিদে করতে হয়। গ্রামের বয়ষ্করা আড্ডা ছেড়ে বাড়ির পথ ধরেছে। বাতাস বেড়ে গিয়েছে খুব। ধূলোবালি একেকজনের চোখেমুখে ডুকে যাচ্ছে। এই সময়টাই মোক্ষম সময় মনে করলো রাসেল মিয়া।
লোকমান চাচা উদাস দৃষ্টিতে বাড়িফেরা মানুষের গমনপথে তাকিয়ে ছিলেন। ভাবছিলেন, ছোটবেলায় আমরা এখান দিয়ে দুষ্টমি করে দৌড়ে বাড়ি যেতাম। বাবা খুব বকতো এই জন্য। লোকটা অনেক ভালো ছিল। ৩৬ বছর আগে এক বৃষ্টিভেজা দিনে বাড়িতে মারা যান। সবচেয়ে আশর্যের বিষয় ছিল,
মৃত্যুর আগে তিনি যুবক লোকমানের হাত ধরে বলেছিলেন, বাবা কখনো অন্যায় কাজে নিজেকে লিপ্ত করো না। জালিমদের সাহায্যকারী হয়ো না। এই বলে তিনি কালিমা পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। খুব সুন্দর মৃত্যু ছিল সেটি। যেন অনাবিল শান্তির এক স্বর্গীয় আভা আসমান থেকে এসে তাকে মহামর্যাদার আসনে বসিয়ে নিয়ে চলে গেছে। হঠাৎ রাসেলের ডাকে লোকমান চাচার ভাবনায় ছেদ পড়লো। রাসেল মিয়া বললো, বাহিরে তো বাতাস বইতাছে। বৃষ্টি আইবো এহন। আফনে ভিতরে আইসা বসেন। লোকমান চাচা ভিতরে এসে
বসলেন। বললেন, আরেকটা চা বানাও। রাসেল মিয়া চা বানাতে বানাতে বললেন, আপনি আমাকে কি যেন বলতে চেয়েছিলেন। লোকমান চাচা খানিকটা ভেবে বললেন, হুম। মনে পড়েছে। তখন তিনি কাউসারের মায়ের থেকে শোনা কথাটা তাকে বললেন।
৩
সকালের স্নিগ্ধ রোদ চারিদিক আলোকিত করে রেখেছে। রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। মাটির রাস্তাগুলো কাঁদা কাঁদা হয়ে রয়েছে। রাসেল মিয়া আজকে মসজিদে যেতে পারেন নি। সে সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিলো। ঘরেই নামাজ আদায় করলেন। তার গত ১২ বছর ধরে প্রাতহ্যিক একটা অভ্যাস আছে। ফজরের নামাজের পর আধা পারা কোরআন শরীফ পড়েন তিনি। এই ধারা আজও অব্যাহত আছে। তিনি নামাজের পর কোরআন শরীফ পড়ে দোকানের পথ ধরলেন। গতরাতে লোকমান চাচার বুদ্ধিতে দোকানের অধিকাংশ জিনিষই, বিশেষকরে কোমল পানীয়গুলো বাড়িতে রেখে এসেছেন। এ জন্য আজকে হয়তো জীবন তালুকদার ওরফে মাতবরের ছোট ছেলে তেমন ঝামেলা করবে না। দোকান খোলার পর তিনি চুলোয় চায়ের জন্য পানি চড়িয়ে দিলেন। একটু পর এক এক করে গ্রামের মুরুব্বি চাচারা এবং অন্যান্যরা এসে চায়ের সাথে সকাল উপভোগ করতে লাগলো। এভাবে কখন যে সকাল ৭ টা গড়িয়ে ৮টা, ৮টা গড়িয়ে ৯টা তারপর ১০টা বেজে গিয়েছে, বুঝাই গেল না। প্রায় সাড়ে দশটার দিকে মাতবরের সাঙ্গ-পাঙ্গরা এসে হাজির। তারা দোকানে ডুকেই কয়েকটা কেক এবং বিস্কুট সাবাড় করে দিলো। তাদের মধ্য থেকে একজন ফ্রিজ খুলে দেখলো,ড্রিংকস আছে নাকি। মাত্র চারটা সেভেন আপের বোতল রাখা। এটা দেখে সে বললো, আর কই? রাসেল মিয়া বললো, দোকানে কোম্পানীর লোকেরা অনেকদিন হলো আসছে না। তাই ড্রিংকস নাই। মাতবরের কু-পুত্রের গুন্ডাবাহিনীরা আধঘন্টায় দোকানের অনেক কিছুই সাবাড় করে দিলো। মোটামুটি ৭০০ টাকার জিনিষ তারা নষ্ট করলো।
রহিম চাচা একজন সাধারণ কৃষক। ধান,
গম, আর পাট চাষ করেন। তার বড় ছেলে হামজা মাদরাসায় পড়াশোনা শেষ করে কলেজে পড়েছে। তারপর ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে। বর্তমানে সে পড়ালেখা শেষ করে ঢাকার সুনামধন্য একটা কোম্পানীর বড় পদে কর্মরত। সে গ্রামে আসলো আজ। এখানে আসলেই সে কেমন যেন অতীতে ফিরে যায়। মনে পড়ে যায়, শৈশবের সোনালী দিনগুলোর কথা। নিজেকে তখন হারিয়ে ফেলে সুদূর অতীতে। যেহেতু ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পাশাপাশি একজন আলেম, তাই প্রায়ই সময় গ্রামে আসলে সে গ্রামের মসজিদে ইমামতি এবং জুমার দিন নামাজ পড়ায়। গ্রামের মুরুব্বিরা তাকে খুব মোহাব্বত করে। সেও রোজগার করার পর মাঝেমধ্যে মুরুব্বিদের হাতের মুঠোয় ৫০০/১০০০ টাকা গুঁজে দেয়। এসব দেখে রহিম মিয়ার গর্বে বুক ফুলে যায়। হামজা কয়েকবার বলেছিল, তার সাথে ঢাকায় থাকতে। কিন্তু চিরচেনা এই নাড়ির টান তাকে এখান থেকে যেতে বাধা দেয়। তাই দুই-তিন সপ্তাহ পর পর হামজা গ্রামে আসে। গ্রামের ছোট বাচ্চারা তাকে খুব পছন্দ করে। দেখা হলেই সে তাদের চকলেট, চিপস কিনে দেয়। এবার সে বাড়িতে আসার পর কিছু একটা কিনতে মাবরুর আর সাব্বিরের গত মাসে করা দোকানটিতে গেল। কিন্তু কাঙ্খিত জিনিষটি পাওয়া গেল না। হামজা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, তোমার দোকানে তো আগে এটা দেখেছিলাম। এখন নাই কেন? মাবরুর তখন হামজাকে মাতবরের ছেলের দৌরত্মের কথা জানালো। বললো, তার কারণে গ্রামের ব্যবসায়ীদের অবস্থা খারাপ। হামজা কখনো ভাবে নি, জীবন তালুকদার এমন করবে। সে যখন ছোট ছিল, হামজা তখন তাকে কোরআন শরীফ পড়িয়েছে। তাই তার জন্য আবশ্যক জীবন তালুকদারকে বুঝানো।
মাতবরের ছেলে গ্রামের দক্ষিণে সদরে যাওয়ার রাস্তার পাশের টুলে বসে খোশগল্প করছে। সে তার এক বন্ধুকে বললো, জানিস, আমার বড় ভাই এলাকায় একটা ব্যবসা শুরু করবে। তার বন্ধু বললো, কেমন ব্যবসা? মুদি দোকান দিবে নাকি?
জীবন তালুকদার রেগে গিয়ে বললো, এই উল্টাপাল্টা কথা বলবি না। জানিস, ওসিকে বলে তোকে জেলে পাঠাতে পারি।
তার বন্ধু বললো, আহহা। রাগ করবি না। মজা করলাম।
হামজা দূর থেকে তাদের দেখতে পেল। কাছে গিয়ে সে সালাম দিয়ে মাতবরের ছেলেকে বললো, কেমন আছো? জীবন তালুকদার তাকে দেখে হেসে বললো, আমি তো ভালোই আছি। দেখেন না, বাপজান এখন মেম্বার। হামজা বললো, হুম। ভালোই তো। মনে রাখবা, আল্লাহ উচ্চ ক্ষমতা দেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। তুমি এলাকার গরীবদের সাহায্য করো। তাহলে আল্লাহ তোমার মর্যাদা আরো বাড়িয়ে দিবেন। জীবন তালুকদার বললো,
আরে রাখেন তো আপনার নীতি কথা। আপনার সাথে আমার কথা বলার ইচ্ছা নেই। আপনি চলে যান। হামজা তাকে আর কিছু না বলে চলে আসলো। মানুষ যে ক্ষমতা পাইলে নিজের অবস্থান ভুলে যায়,
এটা সত্য কথা।
(২ বছর পর)
জীবন তালুকদার ক্রস ফায়ারে মারা গেছে চার মাস হলো। তার বড় ভাই
আবীরকে আদালতের রায় অনুযায়ী গতকাল ফাঁসি দেয়া হয়েছে। জীবন তালুকদারের বন্ধুদের কেউ
কেউ পলাতক, কাউকে আবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মাতবরকে মাত্র গ্রেপ্তার করলো
বিজিবি। পালিয়ে দেশত্যাগ করার সময় ধরা পড়ে যায় সে। এত কিছু কিভাবে ঘটলো। শুরু থেকেই
বলি।
মাতবরের ছেলেদের দৌরত্মের কারণে গ্রামে শান্তি ছিল না। বড় ছেলে
মদের ব্যবসা শুরু করেছিল। যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো তাই। আর জীবন তালুকদার এলাকায়
মদের রাজত্ব কায়েম করে তিনবার মেয়ে গঠিত ঝামেলা করেছিল। তাদের বাবা ছিল এসবের নীবর
দর্শক। দেখেও যেন দেখতেন না। গ্রামের লোকেরা সম্মিলিতভাবে আন্দোলন গড়ে তুললো। এই অবৈধ
মাতবরের পদত্যাগ, সাথে তার ছেলেদের দ্বারা সমস্ত ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ। একে একে মাতবরের
বিরুদ্ধে ৭৫৬টা মামলা হলো। মাতবর টাকা খরচ করেও কিছুই করতে পারলো না। তার টাকা-পয়সা
কোর্টে ঢালতে ঢালতে নিঃশেষ হওয়ার ধারপ্রান্তে। এমন মুহুর্তে জেলার এমপি থেকে নির্দেশ
আসলো, নতুন মেম্বার নির্বাচনের। মাতবর জানে, তার হার নিশ্চিত। তাই সে নির্বাচনেই অংশগ্রহন
করে নি। এদিকে নির্বাচনে ব্যাপক ভোটের মাধ্যমে নতুন মেম্বার হন এলাকার গণ্যমান্য একজন
ভালো ব্যাক্তি। তার দ্বীন মোহাম্মাদ। তিনি দায়িত্ব গ্রহন করার পরই পূর্বের মাতবরের
সমস্ত অভিযোগ পুলিশের হাই-কমিশনারকে ভালোভাবে তদন্ত করতে বললেন। অধিকাংশ মামলাই তার
ছেলেদের খারাপ কর্মকান্ড নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে জীবন তালুকদার এবং তার ভাই আবিরকে
গ্রেপ্তার করা হলো। তারপর রিমান্ড। পুলিশি নির্যাতন সইতে না পেরে জেল থেকে পালানোর
সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার লাশ পুলিশরা এলাকার পূর্বদিকে পুরোনো খালের কোণে
ফেলে আসে। জীবন তালুকদারের বাবা আসাদ তালুকদার ছেলের এই করুণ মৃত্যুতে বুঝলেন, তার
সময়ও শেষ হয়ে আসছে।
আবীরকে
আদালতে তোলা হলো সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে। মাদক ব্যবসা, চোরাচালান কারবার, ধর্ষণ ও
খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়। আসাদ তালুকদার ছেলের এই অবস্থা
দেখে ভাবলেন, তার ফাঁসি বা জেল জীবন নিশ্চিত। তাই পলায়ন করে সীমান্তে পাড়ি দিতে গিয়ে
ধরা পড়েছেন। এখন জেলে তিনি তার মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
সাব্বির
হয়তো কবরে থেকেও আজ শান্তি পাবে। সে নির্দোষ ছিল। অন্যায় অভিযোগের ভিত্তিতে আবীর তালুকদার
তাকে মেরে ফেলে। সবকিছুর কলকাঠি ছিল আসাদ তালুকদারের হাতে। দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। এই অল্প
জীবনে কেউ নিজেকে মহাব্যাক্তি হিসেবে গড়ে তুলে। কেউ বা শয়তানের প্ররোচনায় দাম্ভিকতার
দরুন লাঞ্চিত হয় দুনিয়া ও আখেরাতে।
(গল্পটি
লেখা হয়েছে, ২৫/০৬/২০২১ থেকে ২৮/০৬/২০২১ পর্যন্ত)