প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নামটা শুনলেই বুকের মধ্যে আলাদা এক ভালোবাসা জেগে উঠে। একরাশ ভালোবাসা নিয়েই তাকে স্বরণ করি সর্বদা। হজ্জ্বের সময় মদীনায় হাজী সাহেবরা যখন রাসূলের রওজার সামনে দাঁড়িয়ে “আসসালাতু ওয়াস সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ” বলেন তখন অনেকেই আবেগে অতিশয্য হয়ে কেঁদে ফেলেন। আমরা তাকে নিজের জীবনের চেয়েও অনেক বেশি পছন্দ করি।
কেন আমরা নবীজিকে এতটা পছন্দ করি?
এমন প্রশ্ন যদি আপনাকে করা হয়, তাহলে আপনি কি জবাব দিবেন? হয়তো অনেক কিছুই বলবেন আপনি। বলারই কথা। কারণ, প্রতিটি ব্যক্তির চিন্তাধারা ভিন্ন ভিন্নই হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনেও কখনো মিথ্যা কথা বলেন নি। কাউকে ধোঁকা দেন নি। কাউকে কষ্ট দেন নি। না নবুয়তের আগে না নবুয়তের পরে।
আমরা সিরাতের কিতাবে রাসূলের সিরাত পড়েছি। আমরা রাসূলের জন্মের ইতিহাস পড়েছি। আমরা রাসূলের শৈশবকাল পড়েছি। আমরা রাসূলের যুবক বয়সের ঘটনা পড়েছি। আমরা রাসূলের বৃদ্ধকালের ঘটনাও পড়েছি বা জেনেছি। রাসূল সা. মক্কার সম্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তৎকালীন সময়ে মক্কার নেতৃত্বস্থানীয় গোত্র ছিল কুরাইশের বিখ্যাত হাশিম গোত্র। এই গোত্রের দায়িত্বে ছিলেন তখন আব্দুল মুত্তালিব। তার ছোট ছেলে আব্দুল্লাহর ঘরে জন্মগ্রহন করেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
নবীজির শৈশবকাল কাটে মক্কার অদূরে তায়েফে। কিশোর জীবন ও যুবক বয়সের পুরো সময়টাই মক্কায় কাটে। মক্কায় তৎকালীন সময় নবীজি ভালো মানুষদের একজন ছিলেন। তার সত্যবাদিতার জন্য লোকেরা তাকে উপাধী দেয় আল আমীন। তার বয়স যখন ৪০ তখন তার নিকট সর্বপ্রথম ওহী আসে।
আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়, পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।
তিনি মানুষকে সাম্যের পথে দাওয়াত দিলেন। তিনি মানুষকে জ্ঞানের দিকে
আহবান করলেন। তিনি মানুষকে সমাজের নিকৃষ্ট কালচার পরিহার করে উকৃষ্ট হতে সাহায্য করলেন।
তিনি মুহাম্মাদ সা.।
বর্তমানে এক শ্রেণীর জ্ঞানপাপী ও অপরিপক্ক জ্ঞানের অধীকারীরা বিভিন্ন
জায়গায় বিভিন্নভাবে নবীজির সম্মানে আঘাত করছে। ২০১৪/১৫ তে ডেনমার্কের একজন নবীজির ব্যঙ্গচিত্র
এঁকেছিল। গোটা মুসলিম দুনিয়া ফুঁসে উঠেছিল তখন। এরপর আরো অনেকের নবীজির শানে বেয়দবীমূলক
আচরণ করে।
২০২১ সালে ফ্রান্স নবীজির ব্যঙ্গচিত্রকে প্রকাশ্যে সমর্থন করলে
মুসলিম উম্মাহ ফ্রান্স বয়কটের ডাক দেয়। এটা নিয়ে তখন তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল।
সে সময় ইন্টারনেটে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে রীতিমতো অবাক করে দিয়েছিল সবাই। যদিও এই
হ্যাশট্যাগ বিন্দুমাত্র কাজে আসে না কিছুতে।
গত কিছুদিন আগে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির এক নেত্রী
নবীজির শানে বাজে মন্তব্য করে। এতেও ক্ষুদ্ধ হয় মুসলিম উম্মাহ। মধ্যপ্রাচ্যসহ আরো বেশ
কিছু দেশ ইতিমধ্যেই ভারতকে বয়কটের ডাক দিয়েছে। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে কিছুই বলে নি। বলবেও
না হয়তো। কারণ, স্বামী-স্ত্রীর পরিবারে যত ঝামেলাই হোক না কেন, এদের সম্পর্ক ঠিক থাকে।
যেই দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচিত হয় ভারতের পরোক্ষ সমর্থনে সেই দেশে কিভাবে আশা করা
যায়, তাদের পণ্য বয়কটের ডাক দিবে।
আমরা নবীজির উম্মত হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো, তাকে প্রাণের চেয়েও
বেশি ভালোবাসা। আমি দ্বীনের জন্য ও নবীজির সম্মানের জন্য জীবন দিতে দ্বিধাবোধ করবো
না। এটা আমার ধর্ম শিক্ষা দিয়েছে। কারণ, আামি এমন ব্যক্তির শানে জীবন দিচ্ছি, যিনি
জীবনেও কখনো মিথ্যা কথা বলেন নি। যার উপর পরিত্র আল কুরআন নাযিল হয়েছে। তিনি আমার জীবনের
চেয়েও সবচেয়ে দামী। আমি একজন মুসলিম হিসেবে নবীজির শানে উল্টাপাল্টা কথার প্রতিবাদ
করবোই।
এটাই আমার ঈমানী দায়িত্ব। এটাই আমার শ্রেষ্ঠ দায়িত্ব।