ইবনে বতুতার জম্ম এবং বিশ্বভ্রমণ


ইবনে বতুতা

পৃথিবীতে যত প্রাচীন ইতিহাসবিদ রয়েছেন , তাদের মধ্যে ইবনে বতুতা অন্যতম । তিনি কে ছিলেন , সেই গল্পটাই আজকে আমরা শুনবো । তৎকালীন মরক্কোর তানজাহ্ নগরীতে বাস করতেন একজন সাহসী যুবক । তার নাম আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে বতুতা । বিখ্যাত এক আলেম পরিবারের সন্তান তিনি । লোকেমুখে তিনি ইবনে বতুতা নামেই প্রসিদ্ধ । তার জন্ম ১৩০৪ খৃষ্টাব্দের ২৫শে ফেব্রুয়ারী । বাবার নাম আব্দুল্লাহ আল লাওয়াতি আত তানজী ইবনে বতুতা । মূলত বতুতা হলো , তার বংশীয় উপাধী । হয়তো তার পূর্বপুরুষের কারো নাম বতুতা ছিল । তার বাবা আব্দুল্লাহ ছিলেন সেই এলাকার সবচেয়ে বড় আলেম । তিনি ছিলেন সেখানের জাস্টিস বা বিচারক । সে জন্য তাকে কাজী বলা হতো ।

মরক্কোর তানজাহ্ নগরী
মরক্কোর তানজাহ্ নগরী
ইবনে বতুতা ছোটবেলা থেকেই মেধাবী এবং খোদাভীরু ছিলেন । তাই তানজাহ নজরীর সকলেই তাকে চিনতো । ছোটদের নিকট তিনি ছিলেন শ্রদ্ধার প্রাত্র আর বড়দের নিকট তিনি ছিলেন স্নেহের পাত্র । তার মাতৃভাষা ছিল আরবী । বর্তমানে মরক্কোর সরকারী ভাষা হলো , আরবী এবং ফরাসী । মরক্কোকে আরবীতে মাগরিব বলা হয় । আর তানজাহ নজরী হলো , মরক্কোর উত্তরাঞ্চলে সাগরপাড়ে অবস্থিত ছোট একটি শহর ।বর্তমানে এই শহরের নাম হলো, তানজিয়ারস (Tangiers) । এখন তা মরক্কোর প্রসিদ্ধ বানিজ্য নগরী । ইবনে বতুতা একবার ইচ্ছা করলেন, তিনি হজ্জ্বে যাবেন । তখন তার বয়স ছিল ২১ বছর । সে-কালে হজ্জ্বে যাওয়া বর্তমানের মত এত সহজ ছিল না । স্বাভাবিকভাবে যেতেই ছয়/সাত মাস লাগতো । আর কেউ যদি রাস্তা হারিয়ে ফেলে বা প্রচুর থেমে থেমে যায়, তাহলে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে । তিনি তার এই ইরাদার কথা তার মা-বাবাকে জানালেন । তারা শুনে অত্যন্ত খুশি হলো । তারা অনুমতি দিয়ে দিলেন ।

১৩২৫ সন । এ বছরের ১৪ই জুন । তার হজ্জ্বযাত্রা শুরু হয় । এই যাত্রায় তানজাহ নজরী থেকে কোনো কাফেলা নিয়ে বের হন নি । বের হয়েছেন সম্পূন্ন একা । সাথে পথের সামান্য পাথেয় । তানজাহ নগরী থেকে হাঁটতে হাঁটতে পৌছলেন এক শহরে । নাম মিলিয়ানা । এখান থেকে যুক্ত হলেন এক ব্যবসায়ী কাফেলায় । সেই কাফেলাটি তিউনিশিয়া থেকে এসেছে ।

যাবে পবিত্র মক্কা নগরীতে । মিলিয়ানা শহরটি বর্তমানে আলজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত ।

মিলিয়ানা আলজেরিয়া
মিলিয়ানা শহরটি বর্তমানে আলজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত

ইবনে বতুতা উক্ত কাফেলার সাথে তিউনিসিয়া পৌছলেন । সেখান থেকে আলেকজান্দ্রিয়া । তারপর গেলেন কাহেরা বা মিশরের কায়রো তে । কায়রো থেকে ফিলিস্তিনের গাজা নগরী । সেখান থেকে রামাল্লা । পথিমধ্যে দেখলেন হযরত ইসা আ. এর জম্মস্থান বাইতুল লাহম শহর । বর্তমানে এটার নাম বেত্থেলহেম ।

১৩২৬ সনের ৯ ই আগষ্ট ইবনে বতুতা দামেষ্কে পৌছলেন । এককালে এই দামেষ্ক থেকে মুসলিম খলিফারা পুরো মুসলিম জাহান পরিচালনা করতেন । দামেষ্ক বর্তমানে সিরিয়ার রাজধানী । ১ই সেপ্টেম্বর তিনি দামেষ্ক থেকে একটি হজ্জ্ব কাফেলার সাথে পবিত্র মক্কা নগরীতে এসে পৌছেন । হজ্জ্ব শেষে তিনি যখন তার নিজ মাতৃভূমি মরক্কোর তানজাহ নজরীতে ফিরেন , তখন তার বয়স ৪৫ বছর । এই সফরের মাঝে তিনি দুই যুগ বা ২৪ বছর অতিক্রান্ত করেন । এরই মাঝে তিনি একের পর এক সফর করে গেছেন বিভিন্ন দেশ-মহাদেশে । সাক্ষাৎ করেছেন অসংখ্য রাজা-বাদশাহ এবং জগদ্বিখ্যাত আলেমদের সাথে । সোহবত নিয়েছেন অনেক বুযুর্গ ব্যাক্তিদের । একে একে আমরা সব উল্লেখ করবো ইনশাল্লাহ ।

আলেকজান্দ্রিয়া
আলেকজান্দ্রিয়া

কায়রো
কায়রো 

ফিলিস্তিনের গাজা

ফিলিস্তিনের গাজা
ফিলিস্তিনের গাজা

রামাল্লা
রামাল্লা

বেত্থেলহেম
বেত্থেলহেম

দামেষ্ক

দামেষ্ক
 দামেষ্ক
( চলবে )
এটা যেহেতু একটি ঐতিহাসিক প্রবন্ধ , সেসেব শহরের বর্তমান অবস্থা বা প্রেক্ষাপট বুঝানোর জন্য অনেকগুলো ফটো দেয়া হয়েছে ।

আব্দুর রহমান আল হাসান
লেখক

#buttons=(আমি সম্মত !) #days=(20)

আসসালামু আলাইকুম, আশা করি আপনি ভালো আছেন। আমার সম্পর্কে আরো জানুনLearn More
Accept !