সকালে ঘুমিয়ে ছিলাম
। শীতের সকালে এত তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়তে মন চায় না। কিন্তু ক্রমাগত মোবাইলটি বেজে চলছে
। আড়মোড়া ভেঙ্গে ফোনটি রিসিপ করলাম । ওপাশ থেকে বললো , সালমান ভাই , জলদি মগবাজার আসেন
। শাহেদ ভাই মারাত্মক এক্সিডেন্ট করেছে । মুহুর্তের মধ্যে চোখ থেকে ঘুম হাওয়া হয়ে গেল
। মিনিটের মধ্যে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলাম । তাড়াতাড়ি পাঞ্চাবী পড়ে টুপিটি মাথায়
দিয়ে ঘর থেকে বের হলাম । অতিরিক্ত টেনশনে সিড়ি দিয়ে নামার সময় হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে
বেঁচে যাই । বিল্ডিংয়ের দারোয়ান আমাকে দ্রুতগতিতে বের হতে দেখে অবাক হয়ে গেল । বাহিরে
সকালের মিষ্টি রোদ বইছে । অনেকেই ফুটপাতে দাঁড়িয়ে রোদ পোহাচ্ছে । কেউ বা অযথা হাঁটাহাঁটি
করছে । আমার এখন এসব দেখার সময় নেই । একটি খালি রিকশা দেখে বললাম, চাচা মগবাজার যাবেন
? বললেন, যাবো । ”কত” জিজ্ঞাসা করলাম । বললো, আশি টাকা ।
কোনো কথা না বলে
হাঁটা দিলাম । পকেটে এখন পঞ্চাশ টাকার বেশি এক আনাও নেই । রিকশাওয়ালা কিছুক্ষণ ডাকাডাকি
করে চুপ হয়ে গেল । তাদের নিকট এমন পরিস্থিতি নতুন নয় । তাড়াতাড়ি হাটঁতে গিয়ে একটি উঁচু
জায়গায় পড়তে পড়তে বেঁচে গেলাম । মনের মধ্যে এখন একটা জিনিষই ঘুরপাক খাচ্ছে । শাহেদ
এক্সিডেন্ট করেছে । কীভাবে আর কোথায় এক্সিডেন্ট করেছে , তা এখনো জানি না । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী সে । তার ইচ্ছা , অক্সফোর্ট থেকে ডক্টরেস্ট নিবে
। আমাদের বন্ধুমহলে তার কদর অনেক । হাজার হোক, ঢাবির শিক্ষার্থী সে । সেখানে চান্স
পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার । আমি মৌচাক মার্কেট পার হয়ে মগবাজারের পথ ধরলাম। সিদ্ধশ্বরী
মসজিদ পার হওয়ার পর মাইকে শুনলাম, “একটি শোক সংবাদ ” । কে মারা গিয়েছে ,এখন শোনার টাইম
নেই । মিনিট দশেকের মধ্যে ওয়ারলেস এসে ইমরানকে ফোন দিলাম । সে ফোন রিসিপ করছে না ।
দ্বিতীয়বার ফোন দিতে যাবো তখনি ওয়ারলেস কনফিকশনারি থেকে ইমরানকে বের হতে দেখলাম । আমি
গিয়ে তখন তাকে বললাম, কিরে খবর শুনেছিস ?
সে বললো, হুম ।
: কোন হসপিটালে
নিয়েছে ?
: কমিউনিটিতে ।
আমি ইমরানকে সাথে
নিয়ে কমিউনিটি হাসপাতালে গেলাম । রিসিপসনে যোগাযোগ করে আইসিও তে গেলাম । শাহেদ ভাই
মারাত্মক এক্সিডেন্ট করেছে । ডাক্তারকে বললাম , জনাব! বাঁচবে তো ? তিনি আমাকে বললেন
, আল্লাহ জানেন ।
ঘন্টা দুয়েক পর
আমরা শাহেদ ভাইয়ের সাথে দেখা করার অনুমতি পেলাম । তার সারা শরীর ব্যান্ডেজ দিয়ে বাঁধা
। শুধুমাত্র মুখটা খোলা । শাহেদ ভাইয়ের এই দুরবস্থা দেখে খুব কষ্ট লাগলো । তিনি আমার
হাত ধরে বললেন, সালমান সাবধানে থাকিস । আমার কথা মনে রাখিস ।।
এই কথা বলে শাহেদ
ভাই সেই যে চোখ বন্ধ করলেন আজ অবধি খুললেন না ।
আব্দুর রহমান আল হাসান
লেখক