(৩)
ক্যাপ্টেন
এষ তার অফিসে বসে আছেন ।প্রত্যেকটি গ্রহের আপডেট খবর দেখছেন তিনি । পৃথিবীর চারপাশে আরো তিনটি কৃত্তিম গ্রহ পাঠিয়েছে আমেরিকানরা ।” এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ”মনে মনে বললেন ক্যাপ্টেন । উষান গ্রহে ক্যাপ্টেন মিহকে থাকতে বললেন । সেখানে তারা পদার্থ সম্পর্কে একটি প্রকল্প তৈরী করবেন । হঠাৎ বেলের আওয়াজে ক্যাপ্টেন এষের ভাবনায় ছেদ পড়লো । গ্রীস দাড়িঁয়ে আছে । এষ তাকে ভিতরে আসতে বললেন । তারপর এষ রুমের এক কোণে ওয়াল কম্পিউটারে ক্লিক করার পর একটি ট্যানেলের মত রাস্তা বেরিয়ে এলো । তারা দুইজন তাতে নেমে পড়লেন । এই ট্যানেলটি গতি সেকেন্ডে ৫০ আলোকবর্ষ । তারা মিনিট দুয়েক ট্যানেলে চলার পর ট্যানেল থেমে গেল। ক্যাপ্টেন এষ গ্রীসকে মিল্কিওয়ের দক্ষিণ-পূর্বকোণে অবস্থিত জেড-১৭ গ্রহে নিয়ে গেলেন । এই গ্রহটি ১০ বছর পূর্বে গ্রীস আবিস্কার করেছিল । গ্রহটির বয়স খুব কম । মাত্র ১৭০ বছর । মিল্কিওয়ের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এখনও এই গ্রহ সম্পর্কে কিছুই জানে না । ক্যাপ্টেন এষ এই গ্রহে অনেক বড় একটি ল্যাব তৈরী করেছেন । মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অনেক বড় বড় ১০০ জন বিশেষ বিজ্ঞানী এই গ্রহে গবেষণায় রত আছেন । আর সহকারী রবোটের সংখ্যা তো অসংখ্য ।
জেড-১৭ গ্রহের নীল মাটিতে ক্যাপ্টেন এষ আর গ্রীস একসাথে হাঁটছেন । বর্তমানে সবচেয়ে আতঙ্কিত বিষয় হলো, পৃথিবী । পৃথিবীর অধিবাসীরা অক্সিজেনের মত ভারী গ্যাস নির্ভর হওয়ায় তারা দুর্বল জাতি । আর তাদের শরীর তুলার মত তুলতুলে । কিন্তু এরপরও তারা ভয়ংকর ভয়ংকর অভিযান পরিচালনা করছে । এরই মাঝে ট্রিয়ানরা অনুমতি ব্যাতিত মিল্কিওয়ের সীমানায় প্রবেশ করে পৃথিবীতে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিল । শেষ পর্যন্ত মিল্কিওয়ের সৈন্যরা তাদের নির্মূল করে দিয়েছে । ওই ট্রিয়ানরাও কম নয় । তারাও মৃ্ত্যুর আগে একটি সিগন্যাল পৃথিবীতে প্রেরণ করে । এই জন্য পৃথিবীর অধিবাসীদের অনেকেই এলিয়েনদের বিশ্বাস করে । ট্রিয়ানদের পৃথিবী সম্পর্কে আগ্রহ আছে এই কারণে ,পুরো দুনিয়ায় অক্সিজেন গ্যাস নির্ভর গ্রহ শুধু পৃথিবী । আর পৃথিবীর অধিবাসীরাই শুধু অক্সিজেন নির্ভর । ক্যাপ্টেন এষ গ্রীসকে বললেন , ট্রিয়ানরা তো আমাদের কথা শুনছে না । কী করা যায়
?
গ্রীস বললো
, আমাকে দায়িত্ব দিন । সেনাবাহিনী দিয়ে তাদের কয়েকটা গ্রহে আক্রমন করি । তাহলে তারা আর আমাদের সীমানায় আসার সাহস পাবে না ।
: আমরা ধ্বংস করার জন্য অস্ত্র বানাই নি ।
: এ ছাড়া তো আর কোনো উপায় দেখছি না ।
: আছে । উপায় আছে ।
: সেটা কী
? ক্যাপ্টেন ।
: মিহকে দায়িত্ব দিয়েছি , ট্রিয়ানদের চারপাশে সার্কেল তৈরী করতে ।
: কিন্তু এতে তো আমরা কিছুটা ঝামেলায় পড়বো ।
: কেমন ঝামেলা ?
: ট্রিয়ানদের সাথে আমাদের সীমানা ,একপাশে । সুতরাং আমরা একপাশে সার্কেল তৈরী করতে পারি ।
: হুম । তুমি ঠিক বলেছো । বিষয়টি আমি ভুলে গিয়েছিলাম । তুমি মিহকে একপাশেই সার্কেল তৈরী করতে বলো । আর সীমানায় নজরদারি বাড়াও ।
ইন্টারন্যাশনাল স্যাটেলাইট অব আর্থ । যুক্তরাষ্ট্রের বেলিংহোমে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রক ল্যাব এটি । মহাকাশপ্রেমী বিজ্ঞানীদের স্বপ্নের জায়গা । মহাকাশের প্রায় ৭০%
স্যাটেলাইট এখান থেকে পরিচালিত হয় । এখনে কর্মরত প্রত্যেক বিজ্ঞানী কাজে মত্ত আছেন । দম ফেলার ফুরসত নেই । খবর পাওয়া যাচ্ছে , জিপিএস নিয়ন্ত্রিত স্যাটেলাইটগুলো কয়েকদিন যাবৎ ভুল তথ্য দিচ্ছে । বাংলাদেশ থেকে একজন অভিযোগ করেছে , মালিবাগ থেকে সে ইয়ারপোর্ট যাবে । না চেনার কারণে সে জিপিএস চালু করে । জিপিএস দেখে প্রায় ২৫ মিনিট চলার পর বলা হয়
, গন্তব্যে চলে এসেছে । সে তাকিয়ে দেখে
, তাকে এয়ারপোর্ট না এনে সদরঘাট নিয়ে এসেছে । শেষে ।লোকটির থাইল্যান্ড যাওয়ার ফ্লাইট মিস হয়ে যায় । এমন আরো অনেক অভিযোগ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে । ল্যাবে কয়েকজন বিজ্ঞানী এই ত্রুটি নিয়ে কাজ করছেন । কিন্তু কোনো সমাধান তারা পাচ্ছে না । কারণ স্যাটেলাইটে কোনো ত্রুটি দেখা যায় নি । শেষে জিপিএস এর বড় বড় কয়েকটি স্যাটেলাইট সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে । এতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হয়েছে চীনের । কারণ চীনের তৈরী স্যাটেলাইটগুলোতে এমন ঝামেলা হয় নি । তাই তারা জিপিএস কন্ট্রাক্টকারী প্রতিষ্ঠান এবং গুগোলের সাথে একটি চুক্তিসই করছে । এত ক্ষিপ্ত আমেরিকা । কিন্তু কিছুই করার নেই ।
জিনজিয়াং প্রদেশ চীন । শীপ জিং স্যাটেলাইট । চীনের সবচেয়ে উন্নত স্যাটেলাইট । এটি তিন বছর পূর্বে মহাকাশে প্রেরণ করা হয়েছে । এই কৃত্তিম উপগ্রহটি ভিন্ন একটি পদার্থ দ্বারা নির্মিত । আমেরিকা এই স্যাটেলাইটটি ধ্বংস করার জন্য ছয়টি স্যাটেলাইট মহাকাশে উক্ষেপণ করে । কিন্তু সেগুলো ব্যর্থ হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে । এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চাইনিজদের স্যাটেলাইট বানানোর কৌশল পণ্ডু করতে তাদের খ্যাতিমান কিছু বিজ্ঞানীকে হ্যাইজ্যাক করে । এদিকে চীনও কম চালাক নয় । আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এবং আমেরিকার সেনাপ্রধানকে তারা উধাও করে ফেলে । বেচারা আমেরিকা এতে পড়ে যায় মহাবিপদে । অবশেষে চাইনিজদের বিজ্ঞানীদের মুক্ত করে দিয়েছে তারা । এরপর থেকে চাইনিজরা নতুন স্লোগান বের করেছে , চাইনিজদের সাথে ঝামেলা করা মানেই নিজেকে জীবন্ত কবর দেয়া ।
(৪)
টিওটি+১২০ এটি মিল্কিওয়ের সীমান্ত পাশ্ববর্তী গ্রহ । ট্রিয়ানদের আটঁকানোর জন্য সর্ববৃহৎ সার্কেল তৈরী করেছে মিহ । ক্যাপ্টেন যেভাবে আদেশ দিয়েছেন সেভাবেই নির্মিত হচ্ছে । ট্রিয়ানরা এখনো এই সার্কেল সম্পর্কে জানে না । তারা জানলে খুব খারাপ অবস্থা হতো । টিওটি+১২০ গ্রহে এই মাত্র গ্রীস এসেছে । মিহ তাকে সার্কেলের নকশাটি দেখালো । কিন্তু গ্রীস এ বিষয়ে কোনো ইন্টারেস্টিং দেখা যাচ্ছে না । সে আহত সূরে বললো , তুমি সার্কেল নির্মানের পূর্বেই ট্রিয়ানরা আমাদের সীমানায় চলে এসেছে ।
: এটা কীভাবে সম্ভব ? হতভম্ব হয়ে বললো মিহ ।
: তাদের কিছু আচরণ গত কয়েক বছর যাবৎ আমাকে সন্দেহ সৃষ্টি করছে ।
: কেমন আচরণ
?
: টেকনোলজির দিক দিয়ে যদিও ট্রিয়ানরা আমাদের সমকক্ষ নয় । কিন্তু অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা আমাদের থেকে শক্তিশালী ।
মিহ গ্রীসের কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলো না । তখনি টিওটি+১২০ গ্রহে ট্রিয়ানদের হিওকিল্যাক্সাইড শক্তিশালী বোমা আঘাত হানে । মুহুর্তের মধ্যে টিওটি+১২০ গ্রহের অর্ধেক ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়ে যায় । ট্রিয়ানরা মিল্কিওয়ের শক্তিশালী সার্কেল ভেঙ্গে ফেলেছে । মহাকাশে ট্রিয়ানদের যুদ্ধবিমানগুলো ছড়িয়ে পড়লো । ট্রিয়ানরা জানে
, এই যুদ্ধবিমানগুলোর সাথে তারা লড়াই করতে পারবে না ।
ক্যাপ্টেন এষ গ্রীস এবং মিহের সাথে কন্ট্রাক্ট করার চেষ্টা করছেন । তাদেরকে লাইনে পাচ্ছেন না । এষ চিন্তিতমনে পায়চারি করতে লাগলেন । প্রায় কুড়ি মিনিট পর ক্যাপ্টেন এষ ল্যাবের মনিটরে লাল চিহ্নিত একটি স্থান দেখতে পেলেন । জলদি তিনি সেখানে গেলেন । উক্ত স্থানে একটি রবোট ধ্বংসস্থুপের পাশে পড়ে আছে । ক্যাপ্টেন এষ কম্পিউটারে কোড মেসেজটি অন করলেন । সেখানে লেখা , ক্যাপ্টেন গ্রীস TOT+120 গ্রহের গভীরে এক খাদে চাপা পড়ে আছে । ক্যাপ্টেন তৎক্ষণাত একটি বড় বাহিনী TOT+120
গ্রহে পাঠালেন । তারা ধ্বংসস্তুপে খনন কাজ শুরু করলো । প্রায় ৫ দিন পর গ্রীসের মৃতদেহ পাওয়া গেল । ক্যাপ্টেন তার মৃতদেহ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন । কারণ গ্রীস অনেক বড় বিজ্ঞানী ছিল । কিন্তু এষ ব্যাতিত কেউ তার আবিষ্কারের কথা জানতো না । একটু পর হঠাৎ মৃতদেহটি দেখে ক্যাপ্টেন এষের কেমন যেন সন্দেহ হলো ।
আমেরিকার একটি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে হঠাৎ করে আড়াই হাজার লাখ আলোকবর্ষ দূরের একটি বিস্ফোরণ ধরা পড়ে । বিজ্ঞানীদের ধারণা , হিলিয়াম গ্যাসের বিস্ফোরণে এটি ঘটেছে । আমেরিকার যেই স্যাটেলাইটগুলোতে ত্রুটি ছিল , সেগুলো সারিয়ে ফেলা হয়েছে । এখন আমেরিকা চীনকে ধরাশয়ী করার জন্য ফাঁদ বানাচ্ছে । চীনের উপকূলীয় অঞ্চলে আমেরিকা বেশ কিছু হামলা চালিয়েছে । চীনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো জবাব দেয়া হয় নি ।
বেইজিং , চীন । সরকারের সাথে দেশের বড় বড় বিজ্ঞানীরা একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করছে । কি নিয়ে আলোচনা হতে পারে , আমেরিকার গোয়েন্দারা ধরতে পারছে না ।
জুন মাসের ১৭ তারিখ । আমেরিকার হোয়াইট হাউজের কাছে খবর এসেছে , আমেরিকান গোয়েন্দারা সফল হতে পারে নি ।
চীন সরকার বিজ্ঞানীদের বললেন , আমেরিকা আমাদের উপর ছোটখাটো হামলা শুরু করেছে । অবশ্য আমরা এখনো এর কোনো জবাব দেই নি । তাই কি করা যায় আপনারা বলেন । বিজ্ঞানীদের মধ্য হতে একজন বললেন , আমি চাচ্ছি , নতুন একটি স্যাটেলাইট তৈরী করতে ।
: এই হামলার সাথে স্যাটেলাইটের কি সম্পর্ক ?
: যেহেতু আমেরিকানরা আমাদের উপর ক্ষ্যাপা মহাকাশে কর্তৃত্ব স্থাপনের কারণে ।
: তাহলে আপনি কি স্যাটেলাইট তৈরী করতে চান ?
: বোমারু স্যাটেলাইট ।
: এটা দিয়ে কি হবে ?
: এটা অন্যান্য সকল স্যাটেলাইটকে ধ্বংস করে দিবে । এর ফলে স্যাটেলাইটের দুনিয়ায় আমরা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হবো ।
: এটা না হয় বুঝলাম । কিন্তু আরো ডেঞ্জারাস হলো , মহাকাশ স্টেশন ।
: সেটারও ব্যবস্থা হবে ।
উপস্থিত সকল বিজ্ঞানী এ কথার উপর সম্মত হলো ।
আব্দুর রহমান আল হাসান
লেখক