৭৫৪ খৃস্টাব্দে দ্বিতীয় আব্বাসীয় খলিফা হিসেবে খলিফার মসনদে আরোহণ করেন , আবু জাফর আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আল মানসুর । সংক্ষেপে আমরা তাকে খলিফা আল মানসুর নামে চিনি। সে সময় সবেমাত্র উমাইয়া খেলাফতের পতন হয় । আব্বাসীয়রা শান শৌকতের সাথে খেলাফতের মসনদে আরোহণ করেছে মাত্র । এখনো তেমন কোনো ভালো মানের রাজধানী নির্মাণের জন্য জায়গা পায় নি তারা । যে যেখানে আছে, তিনি সেখান থেকেই প্রশাসনিক কার্য পরিচালনা করছেন। সে সময় খলিফা আল মানসুর ভাবলেন একটি রাজধানীর কথা । একটি শহরের কথা । আর সেই ইচ্ছাটাই বাস্তবে রুপ নিয়েছিল পৃথিবীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান ঐতিহাসিক বাগদাদ নগরী । খলিফা আল মানসুর ৩০শে জুলাই ৭৬২ খৃস্টাব্দে এই শহরটি নির্মাণের অনুমোদন দেন । আর এই নগরটি আবহাওয়া , সামরিক এবং অর্থনৈতিক বিচারে উক্ত স্থানে নির্মিত হয় । গোটা শহরটি নির্মাণে সময় লেগেছিল চার বছর । এটি তৈরীতে প্রায় লাখ খানেকের মত শ্রমিক এবং খ্যাতিমান প্রকৌশলীরা শ্রম দিয়েছেন । এর জন্য ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৪০ লাখ দিরহাম । এর নির্মাণ কৌশল ছিল অসাধারণ । শহরের চারপাশে নিরাপত্তার জন্য খনন করা হয় পরিখা । শহরের চারপাশে নির্মিত হয় মজবুত প্রাচীর ।
বাগদাদ
শহরের প্রবেশপথের উপর গম্বুজবিশিষ্ট একটি পর্যবেক্ষক টাওয়ার ছিল । আর এর শহরের গেটগুলো
এতটাই ভারী ছিল এগুলো খোলা এবং বন্ধ করার জন্য অনেক লোকের প্রয়োজন হতো । খলিফা আল মানসুরের
পরে অন্যান্য খলিফারাও এই বাগদাদের আরো অনেক সংস্কার করেন । ধীরে ধীরে এই শহরের সৌন্দর্য
বৃদ্ধি পেতে থাকে । দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে এটা পরিচিত হয় এক চিত্তাকর্ষক স্থাপত্যশৈলীরূপে ।
এই
বাগদাদ শহরটিতে সে সময় ব্যবসা-বানিজ্য ও শিল্প-সাহিত্যচর্চার কেন্দ্র গড়ে উঠে । শহরের
আনাচে-কানাচে মসজিদ, মাদরাসা ও খানকাহ নির্মিত হতে থাকে । জ্ঞান-বিজ্ঞানের গ্রন্থসমূহ
এখানে একত্রিত করে গড়ে উঠে বাইতুল হিকমা লাইব্রেরী । তৎকালীন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পাঠাগার
ছিল এটি । এখানে বিভিন্ন-গবেষণার মাধ্যমে মানুষ আবিস্কার করছিল আরো অনেক নতুন কিছু
। এই লাইব্রেরীতে তখন খ্যাতিমান সাহিত্যিক এবং কবিদের ভীর লেগে থাকতো । জগদ্বিখ্যাত
ইমাম এবং দার্শনিক ইমাম গাজ্জালী তখন সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন ঐতিহাসিক নিজামিয়া মাদরাসা
। এই বাগদাদ নগরী সবচেয়ে উন্নত হয় বাদশাহ হারুনুর রশীদের আমলে ।
কিন্তু এই শৌর্য-বীর্য বেশিদিন টিকে থাকে নি । ১২৫৮ খৃস্টাব্দে মোঙ্গল সম্রাট হালাকু খাঁ বাগদাদ আক্রমণ করে । আর এই আক্রমণে তারা বাগদাদকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করে । সে বাগদাদের লক্ষ লক্ষ নিরপরাদ নর-নারী এবং শিশুদের হত্যা করে । বাগদাদের যত ঐতিহাসিক নিদর্শন ছিল , সব তারা ধ্বংস করে দেয় । বাইতুল হিকমার বইগুলো তারা দজলা নদীতে ফেলে দেয় । এতে লক্ষ লক্ষ বই কালের গর্ভে হারিয়ে যায় ।
পরবর্তী ইতিহাস পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আব্দুর রহমান আল হাসান
লেখক