(৫)
ট্রিয়ানদের হাই সিকিউরিটি কারাগারে মিহ এবং গ্রীস বসে আছে । খুব জ্বালিয়েছে এই দু’জন । ট্রিয়ানরা তাদেরকে বুদ্ধিমত্তার সাথেই হাইজ্যাক করেছে । তারা শক্তিশালী হিওকিল্যাক্সাইড বোমা TOT+120
গ্রহে আঘাত করে । তারপর গ্রীসের মত দেখতে একটি প্রতিলিপি রবোট তারা সেই গ্রহের গভীর এক খাদে ফেলে রাখে । ট্রিয়ান গ্যালাক্সির প্রধান দৃশ গ্রীসের সাথে দেখা করতে আসে । গ্রীস তার আকৃতি দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে যায় । কিন্তু পরক্ষণে সে নিজেকে সামলে নেয় । দৃশ তাকে জিজ্ঞাসা করে ,
: বলতো , ট্রিয়ানরা বেশি শক্তিশালী নাকি মিল্কিওয়েরা ?
: ”মিল্কিওয়েরা
“ গ্রীস ভয়ে ভয়ে জবাব দেয় ।
: তাই ? তাহলে তোমরা আমাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করো নি কেন ? “দৃশ ঠাট্টার হাসি হাসে ।
: “আমাদের ক্যাপ্টেন অচিরেই অভিযান পরিচালনা করবেন । তখন তোমরা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না ।” গ্রীস দৃঢ় কণ্ঠে বলে ।
তখনি হঠাৎ প্রচন্ড বিস্ফোরণের শব্দ হয় । দৃশ খানিকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে । জলদি সে বাহিরে চলে যায় । পরক্ষণেই শক্তিশালী একটি নিউক্লিয়াম বোমা এসে কারাগারের দেয়ালে আঘাত হানে । দেয়াল ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় । গ্রীস তাকিয়ে দেখে ,ক্যাপ্টেন এষ যুদ্ধের পোশাক পড়ে দাড়িয়ে আছে । সে ক্যাপ্টেনের নিকট যায় ।দূর থেকে মিহকেও আসতে দেখা যায় । ক্যাপ্টেন তাদেরকে নিয়ে স্পেসশীপে উঠে পড়ে । তারপর স্পেসশীপটি মিল্কিওয়ের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে । দৃশ ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকে ।
ইন্টারন্যাশনাল স্যাটেলাইট অব আর্থ । হঠাৎ করেই আমরিকান স্যাটেলাইটগুলোর সাথে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে লাগলো । ল্যাবের সমস্ত বিজ্ঞানী মনিটরে সিগন্যাল বিচ্ছিন্ন হওয়া স্যাটেলাইটগুলোর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতে লাগলেন । কিন্তু ব্যর্থ তারা । শেষে উপায় না পেয়ে তারা মহাকাশ স্টেশনের সাথে যোগাযোগ করলো । কিন্তু এখানেও তারা ব্যর্থ হলেন । তখনি একটি স্যাটেলাইট হঠাৎ অ্যাকটিভ হলো । সেটা ওপেন করার পর দেখা গেলো ,মহাকাশে নাটকীয় হামলার শিকার সকল স্যাটেলাইট । পরমুহুর্তেই সেই স্যাটেলাইটটিও ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো । আমেরিকানরা বুঝতে পারলো , এটা চীনের কাজ । তারা চীনের সাথে যোগাযোগ করলো । ফলাফল শূন্য । পরমুহুর্তেই চীনের একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইটে একটি পোস্ট দেখা গেল । “মহাকাশে আমেরিকার হস্তক্ষেপ । দায়ী কারা
?“ এই শিরোনামে । চায়নারা এই হামলার জন্য আমেরিকাকে কূটনৈতিকভাবে দায়ী করতে লাগলো । এতে আমেরিকা আরো ক্ষেপে গেল । পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে গেল । আমেরিকা সরকার উচ্চপদস্থ সকলকে ডেকে একটি গোপন বৈঠক করলো । সিদ্ধান্ত হলো
, তারা চীনের উপর আক্রমণ করবে ।
বেইজিং, চীন । প্রেসিডেন্ট ভবনে দেশের বড় বড় বিজ্ঞানী , মন্ত্রী, সেনাবাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত হলো । তারা জানে, আমেরিকা এখন চীনের উপর আক্রমণ করবে । দেশের সেনাপ্রধান বললেন, আমরা সাগরে যুদ্ধ জাহাজগুলো নামিয়ে দেই । সেগুলো সাগরে টহল দিবে । আর স্থলে যুদ্ধ হেলিকপ্টারগুলোকে টহল দিতে বলি ।
সাগর প্রতিরক্ষামন্ত্রী বললেন, তারা বেশিরভাগ সময় ড্রোন হামলা করতে পারে । আর সাবমেরিন দিয়ে আক্রমণ করতে পারে ।
একজন বিজ্ঞানী বললেন, মহাকাশে যেহেতু এখন সব আমাদের স্যাটেলাইটগুলো আছে, তাই আমরা আমেরিকার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে পারি ।
উপস্থিত সকলে উক্ত সিদ্ধান্তে একমত হলো । আপাতত আমেরিকা কবে নাগাত আক্রমণ শুরু করে তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই । এদিকে চায়নারা মহাকাশ স্টেশনের সম্পূন্ন নিয়ন্ত্রণ নিজেরা নিয়ে নিল । এ জন্য আমেরিকা আরো বেশি ক্ষেপে আছে । যে কোনো মুহুর্তে তারা আক্রমণ করতে পারে ।
(৬)
PK-100 ট্রিয়ান গ্যালাক্সির শক্তিশালী গ্রহ । ট্রিয়ানদের প্রধান দৃশ একটি ৬০০ তলা বিল্ডিংয়ের ছাদে পায়চারি করছেন । তার কল্পনাজুড়ে এখন একটাই জিনিষ ঘুরপাক খাচ্ছে । সেটা হলো , মিল্কিওয়েদের ধ্বংস বা কবজা করতে হবে । দৃশ ট্রিয়ান গ্যালাক্সির প্রধান বিজ্ঞানী নুবকে ডাকলেন। দেড় মিনিটের মধ্যেই সে উপস্থিত হলো । দৃশ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা মিল্কিওয়েদের দুর্বল স্থান কোনটি ?
মহাবিজ্ঞানী নুব বললেন, সেটা মিল্কিওয়ের কেন্দ্রের দিকে অবস্থিত পৃথিবী ।
: কিন্তু আমরা মিল্কিওয়ের শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে কিভাবে পৃথিবীর নিকটবর্তী হবো
?
: বিষয়টা যদিও কঠিন । তবে উপায় আছে ।
: কি সেই উপায় ?
: আমরা সীমান্ত ডিঙ্গিয়ে মিল্কিওয়েদের সাথে যুদ্ধ করবো । তখন তাদের পুরো দৃষ্টি এদিকে থাকবে । অপরদিকে আমাদের গোপন একটি টিম পৃথিবীতে আক্রমণ করবে ।
দৃশ এই প্রস্তাবে সম্মত হলো । সে ট্রিয়ান সৈন্যদের একত্র হওয়ার আহ্বান জানালো । শক্তিশালী মিল্কিওয়েদের শক্তিহীন করে তারপর তারা ঘরে ফিরবে ।
চীনের সাথে ইতিমধ্যেই আমেরিকানদের হাতাহাতি শুরু হয়ে গিয়েছে । আমেরিকানরা তিনটা চাইনিজ জাহাজ ধ্বংস করলো । আর চাইনিজরা আমরিকানদের পাঁচটা সাবমেরিন , ১০টা হেলিকপ্টার, ৮টা যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেছে । আমেরিকা-চাইনিজ যুদ্ধ আস্তে আস্তে বিশ্বযুদ্ধের দিকে মোড় নিচ্ছে । চিন্তাবিদরা তাই এই যুদ্ধ নিয়ে খুব শঙ্কায় আছেন ।
ট্রিয়ানরা মিল্কিওয়ের সাথে হঠাৎ যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে । ক্যাপ্টেন এষ এই যুদ্ধ নিয়ে খানিকটা চিন্তিত । ট্রিয়ানরা হঠাৎ কেন যুদ্ধ চাচ্ছে, ক্যাপ্টেন এষ তা বুঝতে পারছেন না । মিল্কিওয়েরা প্রথমে আক্রমণ করতে চায় নি। শেষে বাধ্য হয়ে প্রতিরক্ষামূলক আত্রমণে নেমেছে তারা ।
দৃশ সীমান্তে যুদ্ধ লাগিয়ে খুবই গোপনে একটি শক্তিশালী স্পেসশীপ নিয়ে মিল্কিওয়ের ভিতরে প্রবেশ করলেন। তাদের টার্গেট পৃথিবী । প্রায় ঘড়ির টাইমে ১৮৩ ঘন্টা চলার পর তারা পৃথিবীর সৌরজগতে প্রবেশ করলো । পৃথিবীকে টার্গেট করে শক্তিশালী একটি বোম ফিট করলো তারা । কিছুক্ষণ পরই এটি পৃথিবী অভিমুখে গিয়ে আঘাত হানবে । দৃশ গুনতে লাগলেন, দশ.........নয়............আট............সাত...........ছয়..........পাঁচ.........চার....... তিন.................দুই..............এক ।
ক্যাপ্টেন এষ বুঝতে পারছিলেন না
, কেন ট্রিয়ানরা আক্রমণ করছে । তিনি চিন্তিতমনে পায়চারি করছিলেন। সে সময় মিহ এবং গ্রীস তার নিকট আসলো । তিনি তাদেরকে বললেন, ট্রিয়ানরা হঠাৎ আমাদের উপর চটে আছে কেন ?
গ্রীস বললেন, আমরা তো জানি না । একটা কাজ করলে কেমন হয় ?
ক্যাপ্টেন এষ এবং মিহ একসাথে বললেন, কি কাজ
?
গ্রীস বললেন, আমরা ট্রিয়ানদের বড় বড় কর্মকর্তাদের কাউকে হাইজ্যাক করি । তখন তাদের থেকে জেনে নিবো ।
ক্যাপ্টেন এষ এই সিদ্ধান্তে সম্মত হলেন। তারা ট্রিয়ানদের প্রধান বিজ্ঞানী নুবের ব্যাক্তিগত রবোটকে হাইজ্যাক করলো । সেখান থেকে সকল তথ্য বেরিয়ে পড়লো। ক্যাপ্টেন এষ ট্রিয়ানদের এই ভয়ংকর কার্যকলাপের কথা জেনেতৎক্ষণাত পৃথিবী অভিমুখে রওয়ানা হলেন। দৃশ পৃথিবীর দিকে শক্তিশালী বোমাটি আঘাত হানার জন্য যখন বাটনে ক্লিক করলো তখনি বোমটি অ্যাকটিভ হয়ে গেল । সে সময় হঠাৎ পৃথিবীর সামনে বিশাল এক বড় নভোযান দেখতে পেল দৃশ । তাতে ক্যাপ্টেন এষ এবং মিহ,গ্রীস বসে আছে । যখনি দৃশদের বোমাটি অ্যাকটিভ হলো তখনি ক্যাপ্টেন এষ ছোট একটি বোম সেদিকে নিক্ষেপ করলেন । মূহুর্তের মধ্যেই নারকীয় হামলার শিকার হলো দৃশ । তার বোম তার উপরই বিস্ফোরিত হলো ।এতে প্রচণ্ড তাপ সৃষ্টি হলো সৌর জগতে । সেই তাপে পৃথিবীর অনেক পানি বাষ্প হয়ে উড়ে গেল । এবং পৃথিবীর সমস্ত টেকনোলজি অকেজো হয়ে গেল । পৃথিবী ফিরে গেল আবার প্রাচীন যুগে । তবে যাওয়ার আগে তারা খানিকটা দেখতে পেয়েছিল এলিয়েনদের লড়াই । পৃথিবী আবার সাজলো নতুন করে । আবার ফিরে আসলো চিঠির যুগ । মানুষ আবার আরোহণ করতে লাগলো ঘোড়া এবং গাধার পিঠে । শাসনব্যবস্থা আবার ফিরে গেল রাজা-এবং খলীফাদের আমলে । পৃথিবীতে শান্তি ফিরে এলো । মাঝখানে ৪০০ বছর হয়ে গেল সবচেয়ে নোংরা কিছু শতাব্দি । যাকে তখন মানুষ ঘৃণাভরে স্বরণ করে ।
আব্দুর রহমান আল হাসান
লেখক