সে সময় অফিস-আদালত,
কর্মজীবি, শ্রমজীবি ও স্টুডেন্টরা বের হয় তাদের গন্তব্যে পৌছার
জন্য। তাই এই সময়টায় বাসে সীট পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। সাধারণত সীট তেমন কোনোদিন
পাই নি। আজও বরাবরের মতো দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলাম। সাধারণত এই বাসগুলো লোকাল বাসই হয়ে
থাকে। এরা রাস্তার মাঝখান থেকে যাত্রী উঠায় আবার নামায়। বিশেষ করে তারা স্কুল-কলেজ
ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে থামায়। কারণ, এখানে অনেকেই নামে।
মৌচাকের একটু
সামনেই হলো, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ।
বাসে একজন নারী যাত্রী ছিলেন সীটে বসা। তিনি উক্ত কলেজের সামনে নামবেন। তিনি
কলেজের সামনে আসার আগেই বললেন, আমি নামবো। হেলপার এটা শুনেও না শোনার ভান করে রইলো। ড্রাইভার গাড়ির স্প্রিট
আরো বাড়িয়ে দিল। মেয়েটি বারবার বলছে, আমি নামবো আমি নামবো। কে শোনে কার কথা। অবশেষে তাকে নামানো হলো, ওয়ারলেসের সামনে। এতটা দূরে গাড়ি চলে আসায়
উক্ত নারী যাত্রি স্বভাবগত একটু রেগে যান। এতে হেলপার তাকে “কুত্তার বাচ্চা” বলে
গালি দেয় এবং তাকে মারতে যায়। এদিকে বাস টান দিয়ে দেয়ার কারণে সে বাসে উঠে পড়ে।
এরপর বাসে দাঁড়িয়ে
সে বলতে লাগলো, “মহিলা হওয়ায়
ছেড়ে দিলাম। এরা যে ক্যান বাসে উঠে?”
এই হলো লাভলী বাসের হেলপারের আচরণ।
এরপর বাসটি
মগবাজার মোড়ের দিকে যায়। মগবাজার মোড়ের অপরপাশে সাধারণত বাস থাকে যাত্রী উঠানামা
করার জন্য। সেখানে আগে থেকেই একটা “লাভলি” বাস দাঁড়িয়ে ছিল। আমাদের লাভলী বাসটি গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লাভলী বাসের ডানপাশে দাঁড়ায়। যাত্রীরা তো সব বামদিক থেকে উঠে। তাই সে দাঁড়িয়ে থাকা লাভলি বাসের
গাঁ ঘেষে স্প্রিট দ্বিগুণ করে সামনে এগিয়ে যায়। এতে বাসে বাসে সংঘর্ষ হয়। যদিও
কোনো যাত্রীর কিছু হয় নি। কিন্তু এমন কাজে তো জীবন হুমকির মুখে চলে যায়।
এই হলো, আজকে লাভলী বাসের উগ্র হেলপার ও
ড্রাইভারের কাহিনী। বাস চালক ও হেলপার যদি এমন অনৈতিক আচরণ করে, তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় উক্ত বাস মালিক কোন
হিসেবে তাদের নিয়োগ দিল। বাসে নারীরা প্রায় সময় হেনস্থার শিকার হয় এসব উগ্র ও
অনৈতিক হেলপারদের নিকট। ড্রাইভারদের গাড়ি চালানো দেখলে মনে হয়, তারা বিমান চালাচ্ছে। তাদের নিকট মানুষের
নিরাপত্তা নেই।
তারা স্প্রিটে
গাড়ি চালিয়েই যেন শান্তি পায়। দেশে কোনো উধ্বর্তন কর্মকর্তা কি আছেন, যিনি মানুষকে এমন বিপদ থেকে রক্ষা করবেন?
আজ যদি একজন নারী তাদের নিকট হেনস্থার
শিকার হয়, তাদের অদূর ভবিষ্যতে
আপনার কোনো আত্মীয় যে হেনস্থার শিকার হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আজ যদি বাসে বাসে সংঘর্ষ
লেগে কোনো যাত্রী আহত বা নিহত হয় তাহলে এই দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
এই বাসচালক ও হেলপারদের মধ্যে অনেক ভালো ব্যক্তিও রয়েছেন। তাদেরকে আমরা সম্মান করি। তারা প্রতিদিন আমাদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা কর্মস্থলে যেতে সাহায্য করে। কিন্তু আমরা এমন সব চালক ও হেলপারদের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, যারা মানুষকে মানুষ মনে করে না। যাদের নিকট মানুষের জীবন নিরাপত্তা নেই। কেউ কি এগিয়ে আসবেন, এই সমাজের এমন পট পরিবর্তনে?