৩৪১ হিজরীর জিলহজ্জ মাসে আবু তামীম সাদ ক্ষমতা গ্রহণ করে। তার জন্ম
৩১৯ হিজরীর ১১ রমজান। তার মূল নাম, মাআদ বিন ইসমাইল মনসূর। উপনাম আবু তামীম। তার শাসনামলে
তিনি আরো বহু এলাকা ফাতেমী সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত করেন। এর মধ্যে মিসর অন্যতম। ফাতেমী সাম্রাজ্যের গোঁড়াপত্তন যদিও তিউনিশিয়ায় কিন্তু পরবর্তীতে তা উত্তর আফ্রিকায় এবং মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আবু তামীম ছিলেন চতুর্থ শিয়া খলিফা। তার পূর্বে আবু তাহের ইসমাইল ক্ষমতায় ছিল।
আবু তামীম উত্তরাঞ্চলে নিজের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়। ৩৪২
হিজরী সনে তিনি “বাসিল সকলি” নামে একজনকে সূরত অঞ্চলের প্রশাসক নিযুক্ত করে। এই অঞ্চলটির সঠিক ম্যাপটি পাই নি আমি। তাই এটা মূলত কোথায়, আমার জানা নেই। ৩৫৪ হিজরীতে ইহুদীরা হঠাৎ আফ্রিকায় প্রবেশ করে
অনেক অঞ্চল নিজেদের করায়াত্ত্বে নিয়ে নেয়। সে সময় আবু তামীম উত্ত্বরাঞ্চলের বহু অঞ্চল
নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে তার রাজ্যের সীমানা মিসর পর্যন্ত পৌছে যায়। এর ফলে মিসরের আমীর
ও শাসকদেরকে সে আরো কাছ থেকে জানতে পারে।
৩৫৫ হিজরীতে মিসরের এক আমীরের মৃত্যুতে মিসরের অভ্যন্তরে ব্যপক
যোগযোগ সৃষ্টি হয়। আবু তামীম এটাকেই সুবর্ণ সুযোগ মনে করে। তিনি কালবিলম্ব না করে দ্রুত
পরিকল্পনা করেন। তিনি কায়রাওয়ান থেকে মিসরের সীমানা পর্যন্ত অসংখ্য বাংকার ও সেনাছাউনী
তৈরী করেন। পাশাপাশি বড় একটি সেনাবাহিনী প্রস্তুত করেন। তাতে বিপুল পরিমাণ অর্থসামগ্রী
মওজুদ করেন।
![]() |
কায়রাওয়ান অঞ্চল |
এই বাহিনীতে প্রায় এক লক্ষ সৈনিক ছিল। তাদের প্রধান হিসেবে “জাওহার
সকলি”কে নিযুক্ত করা হয়। অবশেষে মিসরীয়দের সাথে আবু তামীমের সৈন্যদের যুদ্ধ হয়। এই
যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল, আব্বাসী খেলাফতের পতন ঘটানো। এমনকি আবু তামীম আন্দালুসকেও
(স্পেন) নিজের আয়ত্ত্বে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তার সভাসদরা এতে আগ্রহী ছিল না বলে সম্ভব
হয় নি।
মিসর দখলের পর আবু তামীমের সেনাবাহিনী ৩৫৮ হিজরীতে শিয়াদের অন্যতম
নেতা জাফর বিন খাল্লাফের নেতৃত্বে দামেষ্কে প্রবেশ করে।
৩৬১ হিজরীতে মিসরে আবু তামীম জামে আযহার প্রতিষ্ঠা করে। যা বর্তমানে
আল আযহার নামে প্রসিদ্ধ। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল, শিয়া মতবাদ
বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেয়া। কিন্তু সুলতান সাহাহউদ্দীন আইয়ূবী রহ. ক্ষমতায় আসার পর তিনি
আল আযহারকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করে সহীহ্ আকীদা ও আহলুস সুন্নাহ মতাদর্শীদের উলামায়ে
কেরামের ইলমী মারকাযে পরিণত করেন।
আবু তামীম মিসর দখলের পর ইচ্ছা করলেন রাজধানী পরিবর্তনের। পূর্বে ফাতেমী সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল মানসূরিয়া নামক জায়গায়। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে মানসুরিয়া এলাকা আলজেরিয়া, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লেবানন, মরক্কো, তিউনিসিয়া ও ইয়েমেন অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছিল।
![]() |
বর্তমান মানসুরিয়া অঞ্চল |
আবু
তামীম ফাতেমী খেলাফতের রাজধানী কায়রো তথা
মিসরে স্থানান্তরিত করলেন। আর উত্তর আফ্রিকার শাসনভার ছেড়ে দিয়ে জায়নবাদী শাসক বলখীন
বিন জিরির হাতে ক্ষমতা তুলে দেন। আবু তামীম ৩৬২ মিসরে আসে। সে সময় তার রাজত্বের সীমানা
প্রাশ্চাত্যের সিবতা থেকে প্রাচ্যের মক্কা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তবে আবু তামীম মিসরে
মাত্র আড়াই বছর থাকতে পেরেছিলেন। ৩৬৫ হিজরীর রবিউল আউয়ালের ৭ তারিখে কায়রোতে সে মৃত্যুবরণ
করে। প্রায় ২৩ বছর আবু তামীম আফ্রিকা ও মিসরে তার শাসনব্যবস্থা বহাল ছিল।
ইতিহাসের বইগুলোতে অনেক সময়
তাকে মুইয নামে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু মুইয নামে আরেকজন ভালো শাসক ছিলেন বিধায় আমরা
তার নামে শুধু আবু তামীম ব্যবহার করেছি।
আবু তামীম সাদ ছিলেন ফাতেমী
সাম্রাজ্যের চতুর্থ খলিফা বা রাজা।