নীল পাহাড় অভিযান ।
পর্ব ২ ।
আব্দুর রহমান আল হাসান ।
(৩)
পাক্কা চারঘন্টা শেষ হওয়ার পর স্কুলে টিফিনের সময় দিলো । এতক্ষণ সে স্কুলের কারো সাথেই ভালোভাবে পরিচিত হয় নি । তা ছাড়া টিফিন ক্যারিয়ারে টিফিন দোকান থেকে কিনে খাওয়ার মত তার কাছে টাকা নেই । সে স্কুল মাঠের এককোণে বসে রইলো । অনেকে এ সময়ে খেলাধূলা করছে । এমন সময়ে কেউ একজন এসে তার পাশে বসলো । প্রথমে সে নিজের পরিচয় দিলো । "আমার নাম আহমাদ । ক্লাস ফাইভে পড়ি । তুমিও তো ক্লাস ফাইভে পড়ো ?
রবিন হ্যা-সূচক মাথা নাড়লো । তখন তাকে আহমাদ বললো ,
: তুমি কি পূর্বে ঢাকার কোনো স্কুলে পড়েছ ?
: না । আমি এই প্রথম ঢাকায় আসলাম ।
: তাহলে তো তুমি ভাগ্যবান ।
রবিন অবাক হয়ে বললো , কীভাবে ?
কারণ , আমরা শহরে থাকতে থাকতে নিজেদেরকে জেল বন্দী মনে হয় । শহর আসলেই খুব বাজে জায়গা । তুমি তো গ্রামে ছিলে । মুক্ত বিহঙ্গে পাখির মত ছুটাছুটি করতে পেরেছ ।
এমন সময় ক্লাসের ঘন্টা পড়ে গেল । আহমাদ বললো , চলো ক্লাসে যাই । টিফিনের পর ইংরেজি স্যারের ক্লাস । ক্লাসে এসে স্যার বললেন ,
: কিরে তোরা গরুর রচনা মুখস্ত করেছিস ?
: জ্বি স্যার । ( ছাত্ররা সমন্বয়ে বললো )
ইংরেজি স্যার রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো , কিরে তুই নতুন আসলি নাকি ?
রবিন ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়লো । তারপর স্যার বললেন ,
:আগে কোন স্কুলে পড়েছিস ?
: গন্ডামারা সানরাইজ স্কুল ।
: তোদের ইংরেজি কে পড়াতো ?
: হাসান স্যার ।
: ও তুই হাসানের ছাত্র । আমি তো ব্যাটা হাসানের বেস্ট ফ্রেন্ট । হো…..হো…….হো……. । হাসান তো খুব ভালো ইংরেজি পারে । দেখি তার ছাত্র কেমন পারে ? " এই বলে স্যার রবিনকে গরুর রচনা ইংরেজিতে লিখতে বললেন । প্রায় দশ মিনিট পর রবিন স্যারকে খাতা দেখালো । রবিনের রচনা দেখে স্যার খুব খুশি হলেন এবং বললেন , "সাবাস ব্যাটা । আমার বন্ধু হাসানের মর্যাদা তু্ই রেখেছিস ।" ক্লাসের অন্যান্যরাও রবিনের খাতা দেখলো । কয়েকজন রচনাটা ছাপিয়ে তাদের দিতে বললো । রবিনের ইংরেজি স্যার তাকে একটি হাতঘড়ি গিফট করলেন । অবশেষে ইংরেজি স্যারের ঘন্টা শেষ হলো । একে একে ধারাবাহিকভাবে কয়েকটা ঘন্টা শেষে স্কুল ছুটি হলো । তখন ক্লাসের অন্যান্যরাও রবিনের সাথে পরিচিত হলো । ক্লাস শেষে রবিনের মা চলে এসেছেন । তাই সে মায়ের সাথে বাসায় ফিরে গেলো ।
(৪)
রবিন মগবাজার কলোনীর পার্কে বসে আছে । এখানে দোলনা , মানব ঢেকি , পিচ্ছিলবোর্ড ছাড়া আর কিছু নেই । কেন যেন রবিনের মন আস্তে আস্তে খারাপ হতে থাকে । সে ভাবে , "গ্রামেই তো ভালো ছিলাম । "
এমন সময় তার ভাবনায় ছেদ পড়ে একজনের ডাকে । একটি ছোট্ট ছেলে দাড়িয়ে আছে । রবিনের সমবয়সী হবে । সে রবিনকে বলে , তোমরা কি নতূন এসেছ ? রবিন হ্যা-সূচক মাথা নাড়ে । ছেলেটি বলে, আমার নাম হিমেল । রবিন বলে , আমার নাম রবিন ।
: আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি ? ( হিমেল বলে )
: অবশ্যই । আচ্ছা তোমরা কি খেলাধূলা করো ?
: হুম । আমরা ক্রিকেট , কাবাডি , গোল্লাছুট খেলি ।
হিমেল রবিনকে তাদের বাসায় নিয়ে যায় । তার মা রবিনকে দেখে খুব খুশি হন । তিনি বলেন , তোমার আম্মুকে একবার আমাদের বাসায় নিয়ে এসো । হিমেলদের বাসায় টিভি ছিলো । রবিনের প্রিয় কার্টুন হলো shaun the sheep . হঠাৎ সে টিভিতে সাউন দ্য শীপের একটি ইপিসোড দেখতে পায় । সে হিমেলকে বলে , এই কার্টুনটা দেখি । আমার প্রিয় কার্টুন এটি। কার্টুন দেখার মাঝে হিমেলের মা তাদের জন্য হালকা নাস্তা নিয়ে এলেন । প্রায় অনেকক্ষণ কার্টুন দেখার পর রবিন বাহিরে তাকিয়ে দেখে , সন্ধা হয়ে আসছে । তখন সে দ্রুত বাসায় রওয়ানা হয়ে যায় । কারণ , মা না জানি আবার চিন্তা করে বসে ।
পরবর্তী পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন .
পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন