নীল পাহাড় অভিযান । পর্ব ১ ।
আব্দুর রহমান আল হাসান ।
প্রচন্ড হুইসেল দিয়ে ট্রেনটি থামলো স্টেশনে । লোকদের হুড়োহুড়ি , কুলিদের হাক-ডাক আর চালকদের অনবরত ডাকাডাকির মধ্যে স্টেশনে নামলো রবিন । চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো । এত লোকজন কখনো একত্রে দেখে নি রবিন । অজঁপাড়া গায়ে কখনো এত থাকে না । রবিন শক্ত করে তার মায়ের হাত ধরে আছে । তার বাবা দু্ই হাতে তিনটা ব্যাগ বহন করছেন । এক কুলি এসে বললো ,: আপনার কষ্ট হচ্ছে । একটা ব্যাগ আমাকে দিন ।
: লাগবে না । যাও ।
: স্যার , এতো ব্যাগ বহন করলে রাতে হাত ব্যাথায় ঘুমুতে পারবেন না ।
রবিনের বাবা কোনো কথা না বলে হাটঁতে লাগলেন । কুলি ছেলেটি কয়েকবার অনুয় বিনয় করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেলো ।
রবিনরা স্টেশনের বাহিরে এসে থামলো । সাথে সাথে একদল চালক "স্যার, কই যাইবেন" বলে ঘিরে ধরলো । রবিনের বাবা চালকদের "আমার গাড়ি আছে" বলে তাড়িয়ে দেন । চালকরা চলে যাওয়ার পর রবিনের বাবা দোকান থেকে এক বোতল ঠাণ্ডা পানি কিনেন আর রবিনকে একটা আইসক্রিম কিনে দেন । কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর রবিনের বাবা জামাল সাহেব সিএনজি খুজঁতে বের হন । অনেকক্ষণ দরদাম করে একটি সিএনজি ঠিক করে রবিনদের নিয়ে গন্তব্যে রওয়ানা দেন ।
(২)
ঢাকার শহরে এই প্রথম আসে রবিন । বাবা সরকারি চাকুরিজীবি হওয়ায় কিছুদিন পর পর তাদের নিবাসের পরিবর্তন ঘটে । পূর্বে চাদঁপুরের একটি গ্রামে তারা ছিল । সেখান থেকে আজ তারা ঢাকায় আসে। তাদের নির্দিষ্ট কোনো গ্রামের বাড়ি নেই । যেখানেই তার বাবার বদলি হয় , সেখানেই তাদের নিবাস হয় । এ যেন এক ভবঘুরে পরিবার ।
ঢাকায় আসার পর সর্বপ্রথম জামাল সাহেবের কাজ হলো ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানো । মগবাজার কলোনীতে সরকারি সহায়তায় কম ভাড়ায় তারা একটি বাসা পেয়েছে । ঢাকার শহরের সব জিনিষের দাম বেশি । কমলাপুর থেকে মগবাজার আসতে সিএনজি চালক আড়াইশত টাকা ভাড়া রাখলো । অথচ রাস্তা কত কম । ছেলেকে কোন স্কুলে ভর্তি করাবেন , তা নিয়ে জামাল সাহেব খানিকটা চিন্তিত । আশেপাশে খোজঁ খবর নিয়ে মগবাজারে "হাজী মহসিন বিদ্যানিকতেন" এ রবিনকে ভর্তি করিয়ে দিলেন । রবিন নতূন স্কুলে এসে মহাখুশি । বছরে তার দু্ই-তিনটা স্কুল পরিবর্তন করা লাগে । পূর্বের স্কুলগুলো সব গ্রামীন পরিবেশে ছিল । এবারের স্কুল হলো শহুরে পরিবেশে । রবিন আগ থেকেই শহর সম্পর্কে জানতো । শহরে কোনো স্বাধীনতা নেই । গাছ-গাছালি নেই । ফলের বাগান নেই । সারাদিন গৃহবন্দী হিসেবে সময় অতিবাহিত করা লাগে । তারপরও স্কুলে যেহেতু কিছুটা সময় মুক্তভাবে হইছই করা যায়, তাই রবিনের স্কুলটা পছন্দ হলো । প্রথমদিন রবিনের বাবা সকাল সকাল তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বাহিরে নিয়ে গেলেন । তারা কলোনী থেকে কিছুটা দূরে একটি হোটেলে ঢুকলো । সবকিছুর দাম আকাশচুম্মি । গ্রামে পাচঁ টাকায় দু্ইটা সিঙ্গারা পাওয়া যায় । ঢাকায় এক পিস সিঙ্গারার দাম ১০ টাকা । জামাল সাহেব পরোটা আর ডাল-ভাজি কিনে ছেলেকে নিয়ে বাসায় রওয়ানা হলেন । বাসায় পৌছে সকালের নাস্তা শেষে রবিনের বাবা তাকে স্কুলে নিয়ে আসলেন । ভর্তি পূর্বেই তার বাবা করে রেখেছিলেন । আজ নিয়ে যাওয়ার পর প্রিন্সিপ্যাল স্যার তাকে জিজ্ঞাসা করলেন ,
: বাবা, তোমার নাম কি ?
: মোঃ রবিন শিকদার ।
: আগে কোন স্কুলে পড়েছ ?
: গন্ডামারা সানরাইজ স্কুল ।
: তোমাদের প্রিন্সিপ্যাল স্যারের নাম কি ছিল ?
: খাইরুল ইসলাম স্যার ।
: আগে কোন ক্লাসে পড়েছ ?
: ক্লাস ফোর ।
: নামতা পারো ?
: জ্বি ।
: বলতো , ৩×৯ কতো ?
: ৩×৯=২৭
: গুড। তোমার ভর্তি সাকসেসফুল ।
এভাবেই রবিন হাজি মহসিন বিদ্যানিকতেনে ভর্তি হলো । স্কুল ছুটি হলে তার মা আসবেন বলে রবিনের বাবা তার নতূন সরকারি চাকুরিতে চলে গেলেন ।